সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর অসুস্থতাজনিত মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘৃণ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। অপপ্রচারে কান না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করতে হবে। এই আহ্বান জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’ ৭১–এর নেতারা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। শনিবার বেলা ১১টায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সভার আয়োজন করে। ফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি নুরুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পড়েন নিরাপত্তাবিশ্লেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার।

সভার শুরুতেই শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন ফোরামের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা লেখক ও সাংবাদিক হারুন হাবীব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্যবাদের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশে যখন মোটামুটি স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এসেছে, তখনই সপরিবার হত্যা করা হয়।

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শহীদ হন ভোর পাঁচটার দিকে। অথচ দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে খুনিরা ঢাকা সেনানিবাস থেকে ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর বড় বড় কামান ও ট্রাক ভর্তি গোলাবারুদসহ বিশাল সৈন্যবহর নিয়ে শহরের দিকে যেতে শুরু করে। অথচ রাষ্ট্রের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ কিছু জানলেন না, বুঝলেন না!

মোহাম্মদ আলী শিকদার আরও বলেন, ঘাতকের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রের কাছে জাতির পিতা ও স্বাধীনতার ঘোষণা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। ঘাতকেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চরমভাবে বিকৃত করে। এমনকি যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হয়ে দম্ভোক্তি করতে থাকে যে, দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধই হয়নি।

তিনি বলেন, আশার কথা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকাঠামো থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল বৈপ্লবিক ঘটনা। কিন্তু তাঁকে হত্যার পর থেকে সমাজে ধর্মবিদ্বেষ এবং বৈষম্য বাড়ছে। লোভের সর্বগ্রাসী বিস্তার ঘটেছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তরুণ প্রজন্মের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাদের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।

অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। এই চক্রান্তকারীরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য। এই চক্রান্ত এখনো চলছে। তাদের প্রতিহত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক, সামাজিক সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

ফোরামের সহসভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, নতুন করে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী রোগাক্রান্ত দেলাওয়ার সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির আজ দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে, ‘কোনো অবস্থাতেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেব না’।

ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। কার কী ভূমিকা ছিল, কার ব্যর্থতা ছিল, কারা নিস্পৃহ ছিল, রাজনীতিকদের ভূমিকা কী ছিল—সব নিরপেক্ষভাবে তুলে এনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জাতিকে জানাতে হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান, অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, ফোরামের যুগ্মমহাসচিব আবদুল মাবুদ ও আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী, ইতিহাসবিদ মমতাজ উদ্দিন পাটোয়ারী এবং ফোরামের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মির্জা মুজিবুর রহমান প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন ফোরামের উপপ্রচার ও গ্রন্থাগার সম্পাদক মুহিত হাসান।

শেয়ার করুন