সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা— এই চার স্কিম নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে। এ পেনশন স্কিম চালুর প্রথম সপ্তাহেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
অবশ্য প্রথম তিনদিনে মানুষ যে হারে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, পরের পাঁচদিন চাঁদা দেওয়ার হার তার থেকে কিছুটা কম। এরপরও প্রথম সপ্তাহেই যে হারে মানুষের সাড়া পাওয়া গেছে এবং যে পরিমাণ চাঁদা জমা হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মানুষ চাঁদা দেওয়া শুরু করলেও, এখনো এ চাঁদার টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তা ঠিক করা হয়নি। তবে, সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাঁদার টাকা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঝুঁকিমুক্ত খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগ বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে।
অবশ্য বিনিয়োগ বিধিমালা তৈরি করতে দেরি হলে প্রাথমিকভাবে সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডে জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলরা।
অপরদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা পড়া চাঁদার টাকা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জমা পড়া চাঁদার টাকা সরকারের ইচ্ছামতো খরচ করা উচিত হবে না। সরকারের যেসব প্রকল্প থেকে নিয়মিত আয় আসে, সেসব প্রকল্পে এ টাকা বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এর বাইরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানি, ভালো কোম্পানির বন্ড, সরকারি ট্রেজারি বন্ডসহ ভালোভাবে ফেরত পাওয়া যায় এবং নিরাপদ এমন খাতে এ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকটাই তড়িঘড়ি করে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন ও চালু করা হয়েছে। এ জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল তা চালুর আগে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এখন পেনশন স্কিম চালুর পর এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকাদের সর্বদাই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
তারা জানান, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় ব্যাপক মানুষের তথ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এসব তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা এখনো নেওয়া হয়নি। এছাড়া এর জন্য যে পরিমাণ জনবল থাকা দরকার, তার ব্যবস্থাও করা হয়নি। তবে পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে সব কাজ করার চেষ্টা করছেন।
গত ১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। শুরুতে প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিম, সুরক্ষা স্কিম এবং সমতা স্কিম এ চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পরপরই সর্বসাধারনের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
উদ্বোধনের পর প্রথম দিনেই নিবন্ধন সম্পন্ন করে ১ হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তারা প্রায় ৯০ লাখ টাকা চাঁদা জমা দেন। পরের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন ছিল। এ দুদিনে আরও ২ হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
এতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৯০ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
পরের পাঁচদিনে (২০ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত) নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন আরও ৪ হাজার ৩৯০ জন। অর্থাৎ প্রথম তিনদিনে যে পরিমাণ মানুষ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন, পরের পাঁচদিনে চাঁদা পরিশোধের সংখ্যা তার থেকে কিছুটা কম।
প্রথম তিনদিনের তুলনায় পরের পাঁচদিনে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও প্রথম সপ্তাহেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৮ হাজার ৫৫১ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৩৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
প্রথম সপ্তাহে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। আর সব থেকে কম নিবন্ধন করে বেশি চাঁদা দিয়েছেন প্রবাসীরা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রগতি স্কিম। বিদেশিদের জন্য চালু করা হয়ছে প্রবাস স্কিম।