জাতীয় কবি কাজী নজরুলের প্রয়াণ দিবস আজ

মত ও পথ ডেস্ক

কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

যে মানুষটা কোনো রুটিনের বাধায় বন্দি ছিলেন না। যখন যা ভালো লাগতো, তিনি তা-ই করতেন। দিন-রাত্রি ভুলে গিয়ে যেকোনো সময় হাজির হতেন কোনো বন্ধুর বাড়িতে। তারপর চলতো অবিরাম আড্ডা আর গান! তিনি আর কেউ নন, বিদ্রোহী কবি, বাঙালির কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এ ধরার মায়া ছেড়েছেন আজ থেকে ৪৭ বছর আগে। তবে, তিনি যেন আমাদের মধ্যেই আছেন।

কোলাহলে কিংবা নিরবতায় তিনি গাইছেন –
বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির।

অথবা

ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল।

রোববার (২৭ আগস্ট) ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এ দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মহান কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেহবাসন হলেও নজরুল রয়ে গেছেন আমাদের মনে। দুর্গম পথ চলতে গিয়ে পথিক যখন পথ হারিয়ে ফেলে তখন পথ খুঁজে পেতে কি করতে হয় সেটি দেখিয়েছেন নজরুল। আমার পথ কীভাবে আমার মুক্তি নির্দেশ করবে তা আমাদের জানিয়েছেন নজরুল। নজরুল আমাদের হতে বলেছেন- উদ্দাম, চঞ্চল, নির্ভয়, স্বচ্ছল, বাধাহীন, বেদুঈন, স্বাধীন। তাই নজরুল লিখেছেন-

মোরা আকাশের মত বাধাহীন
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন

চিত্তমুক্ত শতদল।।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাসাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলাসংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

নজরুল ছিলেন চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

শেয়ার করুন