প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে বলেছেন, দেশে সামনে কী হচ্ছে, কী হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, যে জয়ী হবে, তারা সরকারে আসবে। আজ মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য পড়েন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
এই পর্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমরা দেশের ভেতরে নানা চিত্র দেখতে পাচ্ছি। কেউ বলছেন, আগামী মাসের অত তারিখে দেশ অন্য কারও নির্দেশে চলবে। কেউ বলছেন, আর এক মাস, তারপরই সরকার থাকছে না। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ভেতরে–বাইরে দৃশ্যমান। ভারত, চীন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতেরাও দৃশ্যমান। আমাদের বাম বন্ধুরা চীনে যাচ্ছেন, কেউ কেউ ভারতে যাচ্ছেন। মানুষ বলছে, দেশে হচ্ছে কী, হবে কী। আপনার কাছেও জানতে চাই দেশে হচ্ছে কী, হবে কী?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হচ্ছে কী, হবে কী সেটার সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে। শুধু মেগা প্রকল্পই না। খাদ্য উৎপাদনে কোনো ঘাটতি নেই। বিদ্যুৎ, সড়ক ও কালভার্ট জনগণের কল্যাণেই কাজে লাগছে। জনগণ সুফল ভোগ করছে। সব কিছু জনস্বার্থেই করা হচ্ছে।
যারা দেশকে ব্যর্থ করেছিল তাদের মনোবেদনা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক তো থাকবেই। একসময় যারা দেশটাকে ব্যর্থ করেছিল, তাদের মনোবেদনা থাকবেই। ১৫ বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম, আর বাংলাদেশ এখন কোথায় এসেছে? দ্রুত এত পরিবর্তন আনা কি সহজ কাজ? এটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।
বাংলাদেশ কীভাবে উন্নতি করেছে তা অন্য দেশ জানতে চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটা দেশ জানতে চায়, বাংলাদেশ কীভাবে উন্নতি করল। সবার কাছে বিস্ময়। শুধু দেশের কিছু মানুষ আছে পরশ্রীকাতর। পরের উন্নতি দেখে যারা কাতর হয়। কে কী বলল, তা নিয়ে কম চিন্তা করি। বাংলাদেশের মানুষ আছে, তাদের কল্যাণে কী করব তা নিয়ে চিন্তা করি।
আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে প্রধানমন্ত্রী কী উদ্যোগ নেবেন, তা জানতে চান ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অংশগ্রহণমূলকটা কার অংশগ্রহণ? আমার কাছে অংশগ্রহণ হচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণ ভোট দেবে, যে জয়ী হবে, তারা সরকারে আসবে। ভোট ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, গ্রেনেড হামলাকারী, খুনি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, তাদের অংশগ্রহণ কি জনগণ চায়? তারা অংশগ্রহণ করলেই বৈধ হবে, এটা তো হতে পারে না। তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা, এটা মনে রাখতে হবে।
বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল, এরপর তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তারা নমিনেশন বিক্রি করে, বাণিজ্য করে। নমিনেশন বাণিজ্য করে কিছু টাকা যাবে পল্টনের অফিসে, কিছু গুলশান অফিসে আর মোটা অঙ্ক যাবে লন্ডনে। এই তো তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ। একসময় বলবে, আমরা ইলেকশন করতে পারলাম না, উইথ ড্রো করলাম।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এটিএন নিউজের সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন। গত ১৪ বছরে সবচেয়ে জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ। এটি নিয়েও নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনের ফান্ড কালেকশন করার জন্য এটি করা হচ্ছে। সরকার বদল হলে এই টাকা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে কী বলবেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এই টাকা নিয়ে নির্বাচনের ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগ এতটা দৈন্যদশায় পড়েনি। সর্বজনীন পেনশন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য। এই টাকা সরকারি কোষাগারে যাবে। কেউ নয়ছয় করতে পারবে না। ভালো কাজ করতে গেলেই মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। অর্বাচীনদের কথায় জনগণ কান দেবে না। যারা এখন নেতিবাচক কথা বলছে, তারাও পেনশন স্কিমে আসবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি প্রশ্ন করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। তারা বাইরে গিয়ে বৈঠক করছেন। নির্বাচন এলেই নানা ষড়যন্ত্র হয়। কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না জনগণকে এমন কোনো আশ্বাস দেবেন কি না।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। দেশে জায়গা না পেয়ে বিদেশে গিয়ে কার শিং গজাল, তা আমি দেখব কোথা থেকে। কে কোথায় গেল, কী করল গোয়েন্দা সংস্থাকে খোঁজ নিতে বলব।