সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী গুনে গুনে ৬২ দিন বাকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের। অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের পাতা আর মাত্র দু’বার উলটালেই পরের পাতায় ‘নির্বাচন’। নিয়ম মেনে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে চলতি বছরের অক্টোবরের শেষ রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। কিন্তু চলমান যুদ্ধ এবং মার্শাল ল’র কারণে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়েছে। যুদ্ধকালীন আবহে নির্বাচন হবে কি হবে না, সেটা পরের কথা।
কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো-দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মোটেই তাগিদ নেই ইউক্রেনের রঙ্গমঞ্চের কৌতুক অভিনেতা প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির (৪৫)। ২৪ আগস্ট হঠাৎ করেই যেন তাকে জাগিয়ে তুলল ৯,১৫৩ কিলোমিটার দূরের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র। তিন দিন পর দেওয়া উত্তরে আগের মতোই সেই গাছাড়া ভাব। ঘুম ভাঙলেও যেন কাটছে না যুদ্ধতন্দ্রা। খবর ইউরো নিউজ, পলিটিকো, সিএনএন, এএফপি।
কিয়েভের এক প্রেস কনফারেন্সে সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব যাতে আপনার (জেলেনস্কির) কাছে অস্ত্র আসতে পারে এবং আপনি যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে একই সঙ্গে দুটি কাজ করতে হবে। আগামী বছর ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি চাই দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক।’
রোববার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জেরে গ্রাহামের সেই আহবানের প্রতিক্রিয়া জানান জেলেনস্কি। বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা অর্থায়নে সহায়তা করে তবেই ২০২৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর্থিক সাহায্য ছাড়াও আইনসভার অনুমোদন এবং বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা যুদ্ধের পর থেকে অধিকাংশ জনগণ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি অর্থায়নের প্রশ্ন এবং আইন পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাসহ গ্রাহামের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তিকালীন সময়েই নির্বাচন করতে ৫ বিলিয়ন রিভনিয়া (১৩৫ মিলিয়ন ডলার) খরচ হয়েছে। আমি জানি না যুদ্ধের সময় কতটা অর্থের প্রয়োজন। তাই আমি তাকে (গ্রাহামকে) বলেছিলাম যে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ আর্থিক সহায়তা দেয় তবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অস্ত্র থেকে পাওয়া টাকা নির্বাচনে দেব না এবং এটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়েছে।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যারা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তারাই আজ এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করছে। যুদ্ধের কারণে তাদের এই সুযোগ না দেওয়া অন্যায়। এই কারণেই আমি নির্বাচনের বিপক্ষে ছিলাম।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের আক্রমণের গোড়াতেই (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) মার্শাল ল’ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (৪৫)। পরের মাসেই (২০ মার্চ) রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ১১টি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেন। জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে একবারে ফেলনা ছিল না রুশপন্থি ওই দলগুলো। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে তাই জেলেনস্কির আগ্রহও প্রশ্নবিদ্ধ। তার দল ‘সারভেন্ট অব পিপল’ পার্টিতেও দেখা যাচ্ছে না প্রচারণার তোড়জোড়।
এদিকে যুদ্ধের আগে জেলেনস্কির জারি করা মার্শাল ল’ অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। এই সামরিক আইনের জেরেই প্রায় ডজনখানেক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে সে দলগুলোকে পুনর্বহাল করা হবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। জেলেনস্কি পার্টির বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রো-রাশিয়ান এবং ইউরোসেপ্টিক। যার অর্থ এ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচক ছিল। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভিক্টর মেদভেদচুক। তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যক্তিগত বন্ধু।
জেলেনস্কি ক্ষমতায় আসার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়ায় নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তিনি। দলটিকে ২০২২ সালের জুনে আদালত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আপিলও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে দেন। এর পরই আসে শরিয়ার পার্টির নাম। সরকারিভাবে স্বাধীনতাবাদী দলটির প্রতিষ্ঠাতা আনাতোলি শারি। তার দল ইউক্রেনের মিডিয়া এবং সরকারের সমালোচনার জন্য বিখ্যাত। ২০২৩ সালের মে মাসে রাশিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেনের সাধারণভাবে বসবাস করা উচিত এই উক্তির জন্য তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তার দলের আপিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিমকোর্ট খারিজ করে দেন।
নাশি একটি রুশপন্থি দল। দলটির নেতৃত্বে থাকা ইয়েভেন মুরায়েভ একজন রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া মালিক। ইউক্রেনের বর্তমান সরকারের আক্রমণাত্মক মন্তব্যে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। পূর্বে ‘রুশ ইউনাইটেড’ নামে পরিচিত দেরজাভা। জুন ২০২২-এ আপিলে প্রশাসনিক আদালত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়। ‘ইউক্রেনের প্রগ্রেসিভ সোশ্যালিস্ট পার্টি’ রাশিয়াপন্থি ইউক্রেনীয় দলটিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ‘ইউক্রেনের সমাজতান্ত্রিক দল’ দেশটির প্রাচীনতম দলগুলোর মধ্যে একটি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দলটির নিষেধাজ্ঞার আপিলকে খারিজ করে দেন আদালত।