অবশেষে মারাই গেলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ হিথ স্ট্রিক

ক্রীড়া ডেস্ক

আগেও একবার তার মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। যদিও পরে হিথ স্ট্রিক নিজে জানিয়েছেন, ‘আমি মৃত্যুবরণ করিনি। ভালো আছি।’ কিন্তু এক রোগের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি, যেখানে প্রতিনিয়তই মৃত্যু তাড়া করে ফিরছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে আর ‘নট আউট’ থাকতে পারলেন না। হেরে গেলেন। আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক বোলিং কোচ।

কোলন এবংলিভার ক্যানসারের কাছে হেরে ৪৯ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক এই পেসার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে তার স্ত্রী নাদিনে স্ট্রিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জিম্বাবুয়ের সংবাদমাধ্যম হেরাল্ডকে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর বাবা ডেনিসও।

কয়েকদিন আগেই হিথ স্ট্রিকের সতীর্থ হেনরি ওলোঙ্গা হঠাৎ করেই স্ট্রিকের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করেন। কিন্তু পরে তিনিই আবার নিজের দেয়া সংবাদ যে সত্য ছিল না তা জানিয়ে দেন। হিথ স্ট্রিক নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর সংবাদ ভুয়া। তবে এবারের সংবাদ আর ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, স্ট্রিকের স্ত্রী’ই এ সংবাদ জানিয়েছেন।

নাদিনে স্ট্রিক ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে লিখেন, ‘আজ ভোরে, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রোববার, আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভালোবাসা এবং আমার চমৎকার সন্তানদের পিতাকে তার বাড়ি থেকে স্বর্গীয়দূতরা সঙ্গে নিয়ে গেছেন, যেখানে তিনি তার শেষটা পরিবার ও প্রিয়জনবেষ্টিত হয়ে কাটাতে চেয়েছিলেন। তিনি একা যাননি, আমাদের ভালোবাসা ও শান্তিতে আচ্ছাদিত হয়ে গেছেন। আমাদের অন্তর অনন্তকালের জন্য স্ট্রিকের সঙ্গে মিশে গেছে। যতক্ষণ না তোমাকে আমি পাই।’ সঙ্গে ভগ্নহৃদয়ের ইমোজি জুড়ে দিয়েছেন তিনি।

স্পোর্টসস্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হিথ স্ট্রিকের সাবেক সতীর্থ জন রেনিও তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘হিথ স্ট্রিক আজ সকালের দিকে তার নিজের ফার্মহাউজ মেটাবেলাল্যান্ডে মৃত্যু বরণ করেন। এ সময় তার পাশে পরিবার এবং ভালবাসার মানুষগুলো উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পর শান্তিতেই মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।’

জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার স্ট্রিক ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ছিলেন। নিজের ক্রিকেটিং ক্যারিয়ারে হিথস্ট্রিক ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এক পেসার।

জিম্বাবুয়ের হয়ে তিনি ৬৫টি টেস্ট খেলেছেন। এছাড়া ওয়ানডে খেলেছেন ১৮৯টি। দুই ফরম্যাটেই তিনি রান করেছেন ৪৯৩৩টি এবং উইকেট নিয়েছেন মোট ৪৫৫টি।

সে থেকে এখনও পর্যন্ত হিথ স্ট্রিক জিম্বাবুয়ের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি টেস্টে ১০০০ রান + ১০০ উইকেট এবং ওয়ানডেতে ২০০০ রান + ২০০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

২০১৪ থেকে ২০১৬—এই দুই বছর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন এই ডানহাতি পেসার।

খেলা ছাড়ার পর কোচিংয়ে আসা সাবেক এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বোলিং কোচের দায়িত্ব পান। এ ছাড়া কোচিং ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড, গুজরাট লায়নস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে কাজ করেছেন স্ট্রিক।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা ঝলমলে হলেও একটা কালো দাগ নিয়েই পৃথিবী ছেড়েছেন স্ট্রিক। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিধির কয়েকটি ধারা ভঙ্গের কারণে ২০২১ সালে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্ট্রিক। নিজের কর্মকাণ্ডের (নিয়মভঙ্গ) দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও কখনোই ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলেন না বলে জানিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন