হারলেই বিদায়। জিতলেও নেট রানরেটের কথা মাথায় রাখতে হবে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দুই কঠিন সমীকরণ সহজ করে নিলো টাইগাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ও পাওয়া হলো, বড় জয়ে নেট রানরেটও বাড়িয়ে নিলো বাংলাদেশ দল।
লাহোরে (রোববার) এশিয়া কাপের ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে বাংলাদেশের নেট রানরেট দাঁড়িয়েছে (+০.৩৭৩)। তাতে সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে গেছে টাইগারদের।
আফগানিস্তানের লক্ষ্য ছিল ৩৩৫ রানের। তাসকিন-শরিফুলদের আগুনে বোলিংয়ে ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ রানেই অলআউট হয়েছে আফগানরা।
রান তাড়ায় নেমে ১ রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রহমানুল্লাহ গুরবাজকে (১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন।
শুরুর সেই ধাক্কা সামলে উঠতে জুটি গড়েন রহমত শাহ আর ইব্রাহিম জাদরান। ইব্রাহিম ওয়ানডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছেন। তবে অনেকটাই ধীরগতির ছিলেন রহমত।
অবশেষে ৯৭ বলে গড়া ইব্রাহিম-রহমতের ৭৮ রানের জুটিটি ভাঙেন তাসকিন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রহমতকে বোল্ড করেন টাইগার পেসার। রহমত ৩৩ রান করতে খেলেন ৫৭ বল।
ইব্রাহিম জাদরান ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন। আফগান ব্যাটারদের বাকিরা রয়েসয়ে খেললেও ইব্রাহিম ছিলেন মারমুখী। অবশেষে তাকে সাজঘরে ফেরান হাসান মাহমুদ। এই উইকেটে বড় অবদান উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমেরও।
হাসান মাহমুদের বল ইব্রাহিম ব্যাটে ছোঁয়ালে মুশফিক বাজপাখির মতো ঝাঁপ দিয়ে নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ। যে ক্যাচ দেখে সবার চোখ ছানাবড়া। মুশফিকের এই ক্যাচের কারণে সাজঘরে ফিরতে হয় ইব্রাহিমকে। ৭৪ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে ১০টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান আফগান ওপেনার।
এরপর শহিদি আর নাজিবুল্লাহর ব্যাটিংয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছিল। টানা দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। ৩৭তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজ এসে বোল্ড করেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১৭)। পরের ওভারে শরিফুল ফেরান আফগান অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদিকে (৫১)।
এই দুই উইকেট পড়ার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে আফগানিস্তান। ৫২ রানে আফগানদের শেষ ৭ উইকেট তুলে নেন তাসকিন-শরিফুলরা।
তাসকিন ৪৪ রানে নেন ৪টি উইকেট। শরিফুল ৩৬ রানে শিকার করেন তিনটি। একটি করে উইকেট হাসান মাহমুদ আর মেহেদি হাসান মিরাজের।
এর আগে মেহেদি হাসান মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসভাগ্য সহায় ছিল সাকিব আল হাসানের। প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ওপেনিংয়ে চমক। নাইম শেখের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪৭ বলে জুটিতে ফিফটি পূরণ করেন এই দুজন। ১০ ওভারে হয় ৬০ রানের জুটি। নাইম শেখকে বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন মুজিব উর রহমান। নাইম ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে করেন ২৮ রান।
পরের ওভারে আরও একটি উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর বদলে তিন নম্বরে নামেন তাওহিদ হৃদয়। সুবিধা করতে পারেননি। নিজের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয় (০)। তার উইকেটটি নেন গুলবাদিন নাইব।
এরপর মিরাজ-শান্তর রূপকথার ব্যাটিং। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেন ১৯৪ রান। ৬৫ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। আফগান পেসার ফজলহক ফারুকিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূরণ করেন শান্ত।
আফগান বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছেন মিরাজ আর নাজমুল হোসেন শান্ত। ওপেনিংয়ে নেমে মিরাজ করেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ১১৫ বলে। এরপর শান্তও ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।
তার আগেই অবশ্য উঠে গেছেন মিরাজ। শান্তর সঙ্গে জুটিতে ১৯৪ যোগ করে রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ১১৯ বলে ১১২ রানের ইনিংসে মিরাজ ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কা।
মিরাজ উঠে যাওয়ার পরপরই সেঞ্চুরি পূরণ করেন শান্ত। ১০১ বলে শতরান ছুঁয়েছেন এই বাঁহাতি। শান্তর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি এটি। তার দুর্দান্ত ইনিংসটি সমাপ্তি হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে।
রান নিতে গিয়ে মাঝপথে চলে গিয়েছিলেন শান্ত। ফেরার সুযোগ পাননি। পা পিছলে পড়ে যান মাঝ পিচে। ১০৫ বলে শান্তর ১০৪ রানের ইনিংসটি ছিল ৯ চার আর ২ ছক্কায় সাজানো।
এছাড়া মুশফিক ১৫ বলে ২৫, সাকিব শেষদিকে নেমে ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ আর শামীম পাটোয়ারী ৬ বলে করেন ১১ রান।