প্রচণ্ড গরম; লাহোরের আবহাওয়া বুলেটিনে ৩৩ ডিগ্রি বলা হলেও হোটেল রুমের বাইরে বেরোলেই নাকি ৪০ ডিগ্রির মতো অনুভূত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ কলে বাংলাদেশ দলের তথা টাইগারদের সঙ্গে থাকা টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য নিশ্চিত করেন, এই গরমের কারণেই নাকি গতকাল আর মাঠমুখো হয়নি দল। অনুশীলনের সূচি থাকলেও তা বাতিল করেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সাকিবদের এনার্জি বাঁচিয়ে রেখেছেন আজকের হাইভোল্টেজ ম্যাচের জন্য।
সেখানে লাহোরের গা পুড়ে যাওয়া গরমের পাশাপাশি যে আজ তাদের শাহিন আফ্রিদিদের আগুনে বোলিংও মোকাবিলা করতে হতে পারে। কেননা সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ আজ স্বাগতিক পাকিস্তান। সেদিনের মতো লাহোরের গ্যালারি আজ লাল-সবুজে রঙিন থাকবে কিনা জানা নেই, তবে সাকিব-মিরাজরা যে মাঠ রঙিন করার চেষ্টা করবেন, তা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই।
যদিও ফর্মের তুঙ্গে থাকা দলের সেরা ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তর ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়াটা একটা বড় ধাক্কা। সেই সঙ্গে আগের ম্যাচে আঙুলে ব্যথা পাওয়া মিরাজকে নিয়েও চলছে ফিজিওর চেষ্টা। বিশ্বকাপের আগে এসব চোটাঘাতকে মোটেই হেলাফেলা করতে চাইছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে এসবের মধ্যেই দলের নিয়মিত ওপেনার লিটন দাসকে পাওয়াটা একটা স্বস্তির মতোই। এমনিতে শক্তি আর সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে পাকিস্তান রীতিমতো যে কোনো প্রতিপক্ষের কাছেই এখন আতঙ্ক। তার ওপর ম্যাচটি আবার তাদের নিজেদের মাঠে। তবে স্বস্তির ব্যাপার একটাই, তা হলো লাহোরের ব্যাটিংসহায়ক পিচ। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের এই পিচ পাল্লেকেলের মতো হবে না। তাই ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানি পেসাররা যে ভয়ংকর সুইং আর শর্ট বলের প্রদর্শনী করেছিলেন, তা হয়তো আজ দেখা যাবে না। এই মাঠে প্রথমে ব্যাট করলে নিয়মিত তিনশর ওপর স্কোর হয়ে থাকে। যে সুবিধা আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল।
সেদিন নাঈম শেখের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ওপেন করেছিলেন। আজ যেখানে লিটন দাস চলে এসেছে, সেখানে ওপেনিং জুটি ঠিক কী হবে, আন্দাজ করা যায়নি। দলের সঙ্গে লাহোরে থাকা এক সদস্য অবশ্য ইঙ্গিত করেছেন, লিটনকে দিয়েই ম্যাচ ওপেন করাতে চান হাথুরুসিংহে। সে ক্ষেত্রে ডান আর বাঁহাতি কম্বিনেশনে নাঈম শেখ থাকতে পারেন লিটনের সঙ্গে। মিরাজ সে ক্ষেত্রে তিন নম্বরে শান্তর জায়গায় নামতে পারেন। ম্যাচে প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশন বিচার করে ব্যাটিং অর্ডারে যে পরিবর্তন হবে, সেটা ঢাকা থেকেই ঘোষণা দিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তাই আজকের ম্যাচেও তিন, চার ও পাঁচে কে ব্যাটিং করবেন, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে আফিফ ও শামীমের থাকার সম্ভাবনাই প্রবল।
এমনিতে ওয়ানডেতে দু’দলের মুখোমুখি দেখায় ৩২ বারের মধ্যে মাত্র পাঁচটি জয় বাংলাদেশের এবং সর্বশেষ দু’দলের দেখাও হয়েছিল প্রায় চার বছর আগে বিশ্বকাপে সেই লর্ডসে। সেই ম্যাচটিতে ৯৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে তার আগের চারটি ম্যাচে কিন্তু জয় ছিল বাংলাদেশেরই। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে আবুধাবিতে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়েছিলেন মাশরাফিরা। বর্তমানে সেই ম্যাচের মাত্র তিনজন আছেন বাংলাদেশ দলে। আর পাকিস্তানের আছেন ছয়জন। সব মিলিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের সামনে নতুন পাকিস্তানেরই মোকাবিলা হবে। যে লাহোরে আফগান বধ হয়েছে, সেই লাহোর থেকেই আজ আবার জয়ধ্বনি উঠুক।