শান্তিপূর্ণভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের নয়াদিল্লি যাওয়ার আগে আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ‘পূর্ব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগদান শেষে দুইদিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেন লাভরভ। স্বাধীনতার পর এটিই প্রথম কোনো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশ সফর শেষে ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

universel cardiac hospital

কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকটে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলো যাতে অর্থনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়, সেজন্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য প্রধানমন্ত্রী রাশিয়াকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব শান্তিপূর্ণ উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ করা প্রয়োজন। বৈঠকে উভয় নেতা বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়া দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। তাঁরা এ সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে রাশিয়ার আরো বেশি বিনিয়োগ কামনা করেন। জবাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য (আরএমজি) আমদানির কথা ভাবছেন। এ লক্ষ্যে লাভরভ বাংলাদেশের কাছে আরএমজি পণ্য আমদানি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আহ্বান করেন, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদান এবং যুদ্ধের পরপরই চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়া কীভাবে সহায়তা করেছিল, সেকথা যথযথ সম্মানের সঙ্গে উল্লেখ করেন। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থানের প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে- সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে দৃঢ়ভাবে নীতি বজায় রাখে। তিনি উল্লেখ করেন যে, দেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা ১৯৭২ সালে রাশিয়া সফর করেছিলেন। বৈঠকে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি করা হবে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।

শেয়ার করুন