রাশিয়া সফরে গেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। সেখানে তিনি বলেছেন, তার রাশিয়া সফর উভয় দেশের সম্পর্কের ‘কৌশলগত গুরুত্বকে’ স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য সামনে এনেছে বলে বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এর আগে কিম জং উন গত রোববার তার ব্যক্তিগত ট্রেনে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেন। পরে মঙ্গলবার তিনি দেশটিতে পৌঁছান এবং সেখানে তার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে।
কিমের এই সফরে তার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র শিল্প ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘কিম জং উন বলেছেন- রাশিয়ান ফেডারেশনে তার এই সফর… ওয়ার্কাস পার্টি অব কোরিয়া (ডব্লিউপিকে) এবং উত্তর কোরিয়ার সরকারের কাছে পিয়ংইয়ং-মস্কো সম্পর্কের কৌশলগত গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে।’
মূলত ওয়ার্কাস পার্টি অব কোরিয়া (ডব্লিউপিকে) উত্তর কোরিয়ার একমাত্র রাজনৈতিক দল যা দেশটির ক্ষমতায় রয়েছে।
কিমের এই সফর নিয়ে কেসিএনএ বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে, কিম জং উন মঙ্গলবার সকালে রাশিয়ার সীমান্ত শহর খাসানের ট্রেন স্টেশনে পৌঁছেছেন এবং মস্কো ও অন্য জায়গা থেকে আসা সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন।
পরে কিমকে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী আলেকজান্ডার কোজলভের সাথেও দেখা করতে দেখা গেছে।
এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার এই সর্বোচ্চ নেতার গতিবিধি অস্পষ্ট রয়েছে। অবশ্য জাপানের কিয়োডো নিউজ এজেন্সি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়া জানিয়েছে, তিনি পূর্ব রাশিয়ার ভোস্টোচনি কসমোড্রোমে পুতিনের সাথে দেখা করতে পারেন।
মূলত কিম ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন না। নিজের ১২ বছরের ক্ষমতায় কিম তার দেশ থেকে মাত্র সাতবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং দুইবার আন্তঃকোরিয়ান সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। এর মধ্যে চারটি সফর ছিল উত্তর কোরিয়ার প্রধান রাজনৈতিক মিত্র চীনে।
রয়টার্স বলছে, গত প্রায় চার বছরের মধ্যে রাশিয়ায় এটিই প্রথম সফর কিমের। এছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রথম বিদেশ সফর করছেন তিনি। কেসিএনএ’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ককে ‘নতুন উচ্চ স্তরে’ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিম।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য কিমের এই ধরনের সফরকে আসন্ন বলেছিল এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র আলোচনা সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এছাড়া কিম এবং পুতিন সম্ভবত ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়েও আলোচনা করবেন।
এমনকি রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করে রেখেছে ওয়াশিংটন। এছাড়া নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘আক্রমণাত্মকভাবে’ কার্যকর করার হুমকিও দিয়েছে দেশটি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তাকারী সকলকে ‘জবাবদিহি’ করতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি উভয় দেশকেই মনে করিয়ে দেবো- উত্তর কোরিয়া থেকে রাশিয়ায় অস্ত্র হস্তান্তর করা হবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের লঙ্ঘন। অবশ্যই, আমরা আক্রমণাত্মকভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্থায়নকারী সকল পক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করেছি এবং আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করতে থাকব এবং প্রয়োজন হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেও দ্বিধা করব না।’