সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে দেশের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘দুর্নীতি ক্যানসারের মতো কাজ করছে সর্বত্র। সব জায়গাতেই কিছু না কিছু দুর্নীতি আছে। এমনকি আদালত প্রাঙ্গণেও যে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম নেই, তাও বলা যাবে না।’ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আদালত প্রাঙ্গণও এই ‘ক্যানসার’ মুক্ত নয়—এই বক্তব্যের মাধ্যমে নিঃসংকোচে কথা বলার এবং নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের দুর্নীতির কারণেই হুমকির মুখে পড়ছে। এই শ্রেণির যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা শুরুতেই আইনকে মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৈরি করা আইনগুলোকে তারা তাদের নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করতে শুরু করে। এমনকি তারা আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে এবং তাদের অধীনস্থ হিসেবে সবচেয়ে চৌকস মানুষগুলোকে নিয়োগ দিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। এভাবেই আইনের মারপ্যাঁচে সংঘটিত করে অমার্জনীয় অপরাধ। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিংকট্যাংক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের কারণে বাংলাদেশ গড়ে প্রতি বছর ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়েছে। কাজেই আমরা যতই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুখ দেখি না কেন, যতদিন পর্যন্ত এই দেশ থেকে অর্থপাচার চলতে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত কার্যকর উন্নয়ন বাস্তবায়িত হবে না।
একথা সত্য যে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর আন্তরিক এবং নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা ব্যতীত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় লাভ করা প্রায় অসম্ভব। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাননীয় প্রধান বিচারপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যে দৃঢ় প্রত্যয় দেখিয়েছেন—সেটি দেশের সাধারণ মানুষসহ আমাদেরকেও ব্যাপকভাবে উৎসাহী করেছে। দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে প্রধান বিচারপতি যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, সেটি বাস্তবায়নের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সর্বত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আশা করব, সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন। আর এটির বাস্তবায়ন করা গেলেই জিতবে বাংলাদেশ।