পশ্চিমা বিশ্ব মানেই খারাপ নয়। দীর্ঘ সময় ধরে যে এই ধারণা বয়ে বেড়ানো হচ্ছে, তা এবার পরিত্যাগ করা উচিত। এমনটাই বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি বলেছেন, পশ্চিমা বিশ্ব ‘খারাপ লোক’ নয় এবং পশ্চিমাদের নেতিবাচক উপায়ে দেখার ‘সিনড্রোম’ কাটিয়ে উঠতে হবে।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালায়ালাম নিউজ চ্যানেল এশিয়ানেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করেছেন, তিনি পশ্চিমাদের হয়ে ব্যাটিং করছেন না।
সাক্ষাৎকারে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব খারাপ নয়, কারণ তারা এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে বিপুল পরিমাণ পণ্য এনে ভাসিয়ে দিচ্ছে না। এই নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত এবার।’
তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে বিপুল পরিমাণ পণ্য দিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে না। আমার মনে হয়, ওই পুরোনো চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত যে, পশ্চিমা বিশ্ব খারাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরুদ্ধে। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে গেছে।’
সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কেন আসেননি এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতীয় এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জিনপিং আসেননি কারণ তারা (চীন) চায়নি ভারতকে গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বে দেখতে।’
সাক্ষাৎকারে চীনের বাণিজ্যনীতি নিয়েও পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করেছেন জয়শঙ্কর। তিনি দাবি করেন, বিগত ১৫-২০ বছরে বিশ্বায়নের বৈষম্যের জন্য বিভিন্ন দেশের পণ্য, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান চাপের মুখে পড়েছে, কারণ সেসব দেশের বাজার সস্তা পণ্যে ভরে যাচ্ছে।
এছাড়া করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে বলেও জানান ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সুতরাং অন্য দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়ে তাদেরকে কেবল সম্পদ আহরণকারী হিসাবে ব্যবহার করা নিয়ে বিভিন্ন দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর জন্য পশ্চিমকে দোষ দেওয়া উচিত নয়। অবশ্য জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য ব্যাটিং করছেন না।
চন্দ্রযান-৩ এবং করোনা মহামারির সময় ‘ভ্যাকসিন উৎপাদনের সাফল্যের’ কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে ভারত যেভাবে উৎপাদন ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে, তা আফ্রিকান ইউনিয়নসহ গ্লোবাল সাউথের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করেছে যে- আমাদের মধ্যে কেউ একজন উঠে দাঁড়ালে সকলেরই উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে।’
জয়শঙ্কর দাবি করেন এই কারণে তারা (কিছু দেশ) আমাদের সাথে এমনভাবে নিজেদের শনাক্ত করতে পারছে যা তারা অন্যদের সাথে পারে না। তিনি বলেছেন, গ্লোবাল সাউথের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছে ভারত। আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলেছে ভারতের এই উন্নতি।