টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। চলমান এই আগ্রাসনে প্রায় নিয়মিতভাবেই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হানছে দেশটিতে।
এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জরুরিভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। একইসঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান চাইলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যেতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের জরুরিভাবে গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণসহ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেছেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
সামরিক জোট ন্যাটোর এই মহাসচিব বলেছেন, ‘যদি আমরা যুদ্ধের অবসান চাই, যদি আমরা ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি চাই, তাহলে ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখাই সঠিক উপায়।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। দেশটির জন্য জরুরিভাবে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন, শুধুমাত্র নতুন ব্যবস্থাই নয়, গোলাবারুদ, রক্ষণাবেক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশেরও প্রয়োজন…আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে প্রতিদিন বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে এবং আমাদের ইউক্রেনের এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
অবশ্য মঙ্গলবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া শীত নেমে আসার সাথে সাথে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নানা অবকাঠামো রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সেই মন্তব্যের পরই স্টলটেনবার্গ ইউক্রেন নিয়ে তার বক্তব্য দেন। যদিও প্রতি বছর ইউক্রেনে কত রাউন্ড যুদ্ধাস্ত্র ন্যাটো মিত্ররা সরবরাহ করতে পারে, বা ঠিক কখন কিয়েভে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করা হবে তা বলতে অস্বীকার করেন স্টলটেনবার্গ।
তিনি বলেন, ‘মিত্র দেশগুলো যত দ্রুত সম্ভব (এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পাইলট) প্রশিক্ষণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের গুরুত্ব হচ্ছে এটি (ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের) দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী সমর্থনের বার্তা পাঠায়।’
স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ পথ চলার জন্য প্রস্তুত। এই কারণে নয় যে, ঠিক কতদিন ধরে এই যুদ্ধ চলবে তা আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছি, বরং আমাদের একটি বার্তা পাঠাতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাদের অপেক্ষা বা ধৈয্যের শেষ দেখতে পারবেন না।’
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চলছে এবং বিপরীতদিকে পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তায় পুষ্ট ইউক্রেনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
যদিও ইউক্রেনের সেই পাল্টা হামলা প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতির হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে। স্টলটেনবার্গও বলছেন, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে দ্রুত অগ্রগতি দেখতে চান তিনি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বাহিনী রাশিয়ার প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন অতিক্রম করেছে তবে তারা এখন এমন লাইনের মুখোমুখি হয়েছে যেখানে মস্কো দুর্গ এবং মাইনফিল্ড তৈরি করার সময় পেয়েছে।
উল্লেখ্য, টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
অপরদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তা না করতে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।