পোল্যান্ডের সঙ্গে ইউক্রেনের দ্বন্দ্ব চরমে, বন্ধ হলো অস্ত্র সহায়তা

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সহায়তা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে অন্যতম প্রধান মিত্র পোল্যান্ড। পরিবর্তে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে ওয়ারশ। শস্যচুক্তি নিয়ে বিবাদের জেরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম টানাপোড়েনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিলো পোল্যান্ড।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল যেসব দেশ, তাদের মধ্যে প্রতিবেশী পোল্যান্ড অন্যতম। এই দুঃসময়ে ইউক্রেনকে বহুভাবে সাহায্য করেছে পোলিশরা। ১৫ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধে টিকে থাকতে দিয়েছে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা। কিন্তু আজ সেই পোল্যান্ডের সঙ্গে চরম বিবাদে জড়িয়েছে ইউক্রেন।

এ সপ্তাহে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, কিছু দেশ তাদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছে।

জেলেনস্কির এই মন্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় ‘যুদ্ধের প্রথমদিন থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য করা’ পোল্যান্ড। এটিকে পোল্যান্ডের ব্যাপারে ‘অযৌক্তিক নিন্দা’ বলে প্রতিবাদ জানায় ওয়ারশ।

প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের কারণে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল পোলিশ সরকার।

সবশেষ বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনকে তারা আর অস্ত্র সরবরাহ করবেন না। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনে আর অস্ত্র হস্তান্তর করছি না। আমরা এখন পোল্যান্ডকেই আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সাজাবো।

বিবাদ কী নিয়ে

বিবাদের সূত্রপাত হয়েছিল ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পরপরই। রাশিয়ার আক্রমণে কৃষ্ণসাগরের রুটগুলো বন্ধ হয়ে গেলে শস্য রপ্তানির জন্য স্থলপথে বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয় ইউক্রেন। এর ফলে মধ্য ইউরোপে বিপুল পরিমাণ ইউক্রেনীয় শস্য জমা হতে থাকে।

ঘটনাক্রমে বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই পাঁচটি দেশের ভয় ছিল, ইউক্রেনীয় শস্যের কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্যের দাম কমে যাবে, আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশীয় কৃষকরা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে ইইউ আর সেটি নবায়নের আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ড নিষেধাজ্ঞাটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইউরোপীয় কমিশন বারবার বলেছে, পৃথকভাবে কোনো সদস্য দেশ জোটের বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করতে পারে না।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) ইউরোপের ওই তিন দেশের বিরুদ্ধে মামলা করে ইউক্রেন। দেশগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে কিয়েভ।

ইউক্রেনীয় অর্থনীতি মন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো বলেছেন, আমাদের জন্য এটি প্রমাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, পৃথক সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে না।

কিন্তু পোল্যান্ড বলেছে, তারা ইউক্রেনীয় শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখবে এবং ডব্লিউটিওতে নালিশ জানানোয় তারা মোটেও খুশি নয়।

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দ্বন্দ্ব বাড়ালে ইউক্রেন থেকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়াবে পোল্যান্ড।

পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বহুপাক্ষিক ফোরামে পোল্যান্ডের ওপর চাপ দেওয়া বা আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ জানানো দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের কোনো উপযুক্ত পদ্ধতি নয়।

ওয়ারশতে ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর কিয়েভ বলেছে, পোল্যান্ড যেন ‘আবেগ একপাশে রেখে’ সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়।

অবশ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া- তিন দেশই বলেছে, তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্যান্য বাজারে ইউক্রেনীয় শস্য পাঠানোতে কোনো বাধা নেই।

সূত্র: বিবিসি

শেয়ার করুন