শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডা ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে বড় প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ভারতে একটা বিশাল অংশের শিক্ষার্থী প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা নিতে কানাডা গিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কানাডা চলতি মাসে জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত সব বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে। শিল্প গবেষকদের অনুমান, কানাডা ও ভারতের মধ্যকার বড় অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) দ্বিমুখী বাণিজ্যকে প্রায় ৭১৫ কোটি টাকা (৬.৫ বিলিয়ন ডলার) বাড়িয়ে দিতে পারে। যা ২০৩৫ সালের মধ্যে কানাডার জন্য ৪১৮ কোটি টাকা (৩.৮ বিলিয়ন ডলার) থেকে ৬৪৯ কোটি টাকা (৫.৯ বিলিয়ন ডলার) জিডিপি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এ সবকিছুই এখন অনিশ্চিত। খবর রয়টার্সের।
তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক অবশ্য মনে করেন, ভারত ও কানাডার মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনা হয়তো শেষ পর্যন্ত দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাদের মতে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক পরিচালিত হয় বাণিজ্যিক স্বার্থের দ্বারা।
ভারত ও কানাডার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। ২০২২-২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮১৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে ভারত ৪১০ কোটি ডলারের ওষুধ, রত্ন, অলংকার, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি করেছে। আর দেশটি কানাডা থেকে আমদানি করেছে ৪০৬ কোটি ডলার মূল্যের ডাল, কাঠ, মণ্ড ও কাগজ এবং খনিজ দ্রব্য।
মুম্বাইভিত্তিক রপ্তানিকারক ও টেকনোক্রাফট ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শারদ কুমার সারাফ মনে করেন, ভারত ও কানাডার মধ্যকার বর্তমান শীতল সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই একটি উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে ব্যবসার স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়। রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব সময়ই একটি সাময়িক ব্যাপার এবং এর মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।
এ ছাড়া কানাডা তার উচ্চমানের শিক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। প্রধানত উচ্চ স্তরের নির্দেশনা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের টিউশন ফির কারণে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটি শীর্ষ পছন্দগুলোর মধ্যে একটি। ফলে ভারত ও কানাডার মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। দুই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০০টির বেশি শিক্ষাবিষয়ক সমঝোতা রয়েছে। এর বাইরে কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ১৯ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় ভারতীয়রা সবার শীর্ষে রয়েছেন।
কানাডার ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের তথ্য জানাচ্ছে, ২০২১ সালে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা কানাডার অর্থনীতিতে ৪৯০ কোটি ডলারের অবদান রেখেছেন। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, দুই দেশই শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা থেকে লাভবান হচ্ছে। সুতরাং এ সম্পর্ক বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেই মনে হয়।