প্রবাসী আয় কমে যাওয়া চিন্তার বিষয়

সম্পাদকীয়

রেমিট্যান্স
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গত তিন বছরে শ্রমিকের অভিবাসন প্রায় চার গুণ বাড়লেও দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে ১৭ শতাংশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার, ২০২১ সালে ৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ২০২২ সালে ৬ লাখ ১২ হাজার বাংলাদেশি উপসাগরীয় দেশটিতে চাকরিতে গেছেন। কিন্তু শ্রমিকের এই বিপুল বৃদ্ধির সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহের যেন কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা, প্রবাসী আয়ের বড় অংশই আসছে হুন্ডিতে! আরও ভয়ের বিষয়, একটা অংশ দেশেই আসছে না। জানা গেছে, মাত্র এক মাসেই রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে এসেছে! আগস্টে জুলাইয়ের চেয়ে ২১ শতাংশ রেমিট্যান্স কমে যাওয়া অবশ্যই চিন্তার বিষয়।

এ বিষয়ে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যতটা জানা যায়, এমএফএসে হুন্ডি চক্র প্রবেশের পর প্রায় পুরো রেমিট্যান্স চলে গেছে হুন্ডিতে। এতে সৌদি রিয়াল সেখানেই থেকে যায়। এই অর্থ তারা ভিজিট ভিসায় যাওয়া লোকদের কাছে, ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে। তাই আমরা মনে করি, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে হুন্ডির সংযোগ জরুরি ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো মুশকিল হয়ে যাবে। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর বদলে বিভিন্ন এমএফএস বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের এজেন্টদের দিয়ে স্থানীয়ভাবে হুন্ডির টাকা আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার, বাংলাদেশে ব্যাংক রেট বাড়লে অনেক সময় হুন্ডি সংগ্রহকারীরাও রেমিট্যান্স ব্যাংকে পাঠায়! তাই এক্ষেত্রে ব্যাংক রেটও গুরুত্বপূর্ণ।

বাস্তবতা পর্যালোচনায় বলা যায়, হুন্ডির রেট বেশি এবং হুন্ডির তাৎক্ষণিক সেবার বিকল্প তৈরি করতে পারেনি সরকার। প্রবাসীর এক ফোনকলেই হুন্ডির টাকা দেশে তার পরিবারের কাছে তাৎক্ষণিক পৌঁছে যায়। অন্যদিকে ব্যাংকের হয়রানি; লাঞ্চের পরে আসেন, কাল আসেন; ব্যাংকিং আওয়ার শেষ; বড় ট্রানজেকশনের বেলায় ম্যানেজার নেই, কাল আসেন– এসবে মানুষ বিরক্ত! অভিযোগ রয়েছে, প্রথমবার রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো খুব হয়রানি করে। অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র চায়। এতে শুরুতেই প্রবাসীদের আস্থা উঠে যায়। একই সঙ্গে টাকা পাচার ও হুন্ডি বাণিজ্যের বড় বাধার পাশাপাশি ডলারের দরে পার্থক্য থাকায় খোলাবাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অসাধু চক্র মোবাইল ব্যাংকিং সহযোগে কোড বা ওটিপি মেসেজ চুরি করছে। জাল কাগজপত্রেও মানুষ বিভ্রান্ত এবং প্রতারিত হচ্ছে। যা দেশের প্রবাসী আয়প্রবাহে বাধা তৈরি করছে।

দেশের স্বার্থে, এক্ষেত্রে সবধরনের জালিয়াতি ও পাচার বন্ধ করে সঠিক নিয়ম-নীতি প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।

শেয়ার করুন