বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় তখন দেশে সুশাসন থাকতে হয়, আইনের শাসন থাকতে হয়। সামরিকতন্ত্রে আইনের শাসন থাকে না, সুশাসন থাকে না। আমি জানি, বাংলাদেশেও এখন অনেকে স্বপ্ন দেখছেন দেশে সামরিক শাসন আবার আসবে। এই স্বপ্ন দেখে লাভ নাই। কেননা এই স্বপ্ন দেখে আপনি পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে পারবেন না। পর্যটন করতে হলে, পর্যটনের উপযোগী পরিবেশ লাগবে। সেই সুযোগ একমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশই আপনাকে দিতে পারে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, গত ১৫ বছরে পর্যটনের যে উন্নয়ন হয়েছে বিগত ৩৭ বছরেও সেই উন্নয়ন হয়নি।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে মুজিব’স বাংলাদেশ উদযাপনে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ সাক থেকে পর্যটনের যাত্রা শুরু। সেই হিসেবে পর্যটনের ৫২ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এই সময়ে আমাদের যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, আমরা ততটা এগিয়ে যেতে পেরেছি কি-না, এটি একটি প্রশ্ন থাকে। এটার কারণ খুবই সহজ। আমরা কেউ হয়তো মুখে উচ্চারণ করতে চায় না; যেকোনো দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন যদি জারি থাকে, সেই দেশ কখনোই উন্নতি করতে পারে না। আমাদের দেশেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এই সামরিক স্বৈরতন্ত্র যে রাজনীতি নিয়ে এসেছিল, তা ঠিক আমাদের দেশটি যে কারণে সৃষ্টি হয়েছিল তার ঠিক বিপরীত অবস্থানে ছিল তাদের চিন্তা এবং ভাবনা। সেজন্য দেশ যেমনি এগিয়ে যায়নি, তেমনিভাবে পর্যটনও সেই মাত্রায় এগুইনি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে একটি গণতান্ত্রিক সরকার অব্যাহতভাবে ১৫ বছর যাবৎ কাজ করার কারণে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সব জায়গায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। ফলে পর্যটন শিল্পেও ঘটেছে যুগান্তকারী বিকাশ। এই পরিবর্তনকে ধরে রাখতে দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার থাকতে হবে।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন,গত পাঁচ বছর একটি বিষয় নিয়ে খুব বেশি পরিশ্রম করেছে আমার কমিটি। আমি খুবই আনন্দিত, সেই কাজের একটি অংশ আজকে দেখবো। সেটি হলো-‘প্লাস্টিক ফ্রি সেন্ট মার্টিন’ উদ্বোধন করা হবে। আমি সর্বশেষ যে সভাটি করেছি, সেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে ডেকেছিলাম; তাদেরকে সেন্ট মার্টিনের প্রতিটি রাস্তা কীভাবে প্রশস্ত করতে হবে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাস্তাগুলোকে সর্বনিম্ন ২০ ফুট প্রশস্ত করতে হবে। আমরা আশা করছি, অচিরেই একটি দৃষ্টিনন্দন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে সম্পৃক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অন্যতম হাতিয়ার পর্যটন শিল্প।
এ সময় স্পিকার ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ এবং ‘প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন’ উদ্যোগের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বুকে পর্যটন শিল্পে এক অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং গৌরবময় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক৷ এদেশের প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্র্য অন্য দেশের থেকে অনন্য এবং একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাই পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এদেশের মানুষ অতিথিপরায়ন এবং বন্ধুবৎসল। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্মিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি, দীর্ঘতম অখণ্ড সমুদ্রসৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী, প্রসিদ্ধ খাবার, সঙ্গীত এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ইত্যাদির আকর্ষণে বিদেশিরা এদেশে ছুটে আসেন।
স্পিকার বলেন, প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দায়িত্বশীল পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর অর্থনৈতিক সুফল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. রাহাত আনোয়ার।