ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞ কেউই সুবিধা করতে পারেননি। তবে আগের ম্যাচের মতোই তানজিদ তামিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তাতে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইংলিশদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে তা যথেষ্ট হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হেরেছে ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
সোমবার গুয়াহাটিতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৪ রান এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে। বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯৭ রানের। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪ ওভার ১ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংলিশরা।
ইনিংসের প্রথম বল পায়ের ওপর করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেটা লেগ বাইয়ে বাউন্ডারি হয়। এমন বাজে শুরুর পর দ্রুতই ফিরে এসেছেন এই পেসার। ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করেছিলেন। সেখানে পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে তানজিদ তামিমের হাতে ধরা পড়েছেন ডেভিড মালান। ৪ রান করা এই ইংলিশ ওপেনারকে ফিরিয়ে প্রথম ওভারেই উইকেটের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর জনি বেয়ারস্টো রীতিমতো টর্নেডো বইয়ে দেন। আর সেটার সিংহভাগই গেছে হাসান মাহমুদের ওপর দিয়ে। বেয়ারস্টোর তান্ডবে এই ডানহাতি পেসার বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ২১ বলেই প্রথম ফিফটির দেখা পায় ইংল্যান্ড।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে সেই ঝড় থামিয়েছেন মুস্তাফিজ। এই বাঁহাতি পেসারের দুর্দান্ত ইয়র্কারে ব্যাট নামানোর আগেই স্টাম্প ভেঙে যায়। সাজঘরে ফেরার আগে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ৩৪ রান। হ্যারি ব্রুককে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসান মাহমুদ। গুড ল্যান্থের ডেলিভারিতে ব্রুকের অফ স্টাম্প গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই টাইগার পেসার। ফলে ১৫ বলে ১৭ রানে শেষ হয়েছে ইংলিশ এই ব্যাটারের ইনিংস।
এরপর নেমেই ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। তার ঝড় থামিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট ডেলিভারিতে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন বাটলার। সীমানার কাছে সেই ক্যাচ অনায়াসে নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। ফলে ৩০ রান করেই ফিরতে হয়েছে বাটলারকে।
লিয়াম লিভিংস্টোনকে থিতু হতে দেননি তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের লেংথ বলে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর ডাইভিং ক্যাচে আউট হয়েছেন লিভিংস্টোন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ৭ রান।মঈন আলী উইকেটে এসে দ্রুত গতিতে রান তুলেছেন। দারুণ সব শটে পাত্তায়ই দেননি বোলারদের। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৫৬ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি।
এরপর বাকিটা পথ ক্রিস উইকসকে নিয়ে নিরাপদেই পাড়ি দিয়েছেন জো রুট। এক প্রান্ত আগলে রাখা এই ব্যাটার ৪০ বলে ২৬ রান করে দলকে জিতেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে ২৩ রানে ২ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার মুস্তাফিজ। তাছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।
এর আগে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আরেকবার ব্যর্থ হয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাস। বাউন্ডারি মেরে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তবে রিস টপলির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন পরমুহূর্তেই। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে করেছেন ৬ বলে ৫ রান।
এরপর তিনে ব্যাট করতে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত। টপলির বলে থার্ডম্যানে গাস অ্যাটকিনসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। তার আগে করেছেন ১১ বলে ২ রান।
দারুণ শুরুর পর এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করছিলেন তানজিদ তামিম। টপ অর্ডারের বাকি দুই ব্যাটার ব্যর্থ হলেও দলকে কক্ষপথেই রেখেছিলেন জুনিয়র তামিম। তবে ১৬তম ওভারে তাকে আটকে দিলেন মার্ক উড। এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৪ বলে ৪৫ রান।
ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। খানিকটা শর্ট লেন্থে পড়া বল এতটাই নিচু হয়েছে যে মুশফিক সেটা ব্যাটে খেলতেই পারেননি। আদিল রশিদের নিচু হওয়া বলে খানিকটা বোকাই বনেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ২১তম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ৮ রান।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আর বিশ্বকাপ মিশনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন তিনে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে অপরাজিত ফিফটি পেয়েছিলেন। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামেন চারে। এখানেও সফল তিনি। ইতোমধ্যে ৬২ বলে ফিফটি তুলে নিয়েছেন।
মিরাজ এক প্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশ। উইকেটে থিতু হয়ে এবার ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রাইকরেট বাড়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। আদিল রশিদকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাউ কর্নারে ধরা পড়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ১৮ রান।
মাহমুদউল্লাহ সাজঘরে ফেরার পরই বৃষ্টি হানা দেয়। বৃষ্টির কারণে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য বন্ধ থাকে খেলা। এরপর মাঠ খেলার উপযুক্ত করে শুরুর সময়ও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই সময়ের মিনিট পাঁচেক আগেই আবারও নামে বৃষ্টি। তাতে আবারও পিছিয়ে যায় খেলা শুরুর সময়। অবশেষে বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৮ টায় আবারও শুরু হয় খেলা। মাঝে সময় নষ্ট হওয়ায় কমেছে ম্যাচের দৈর্ঘ্য। ৩৭ ওভারে হয়েছে ম্যাচ। যেখানে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ।