প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব। ইলেকশনের পরে, যদি আসতে পারি, আবার করব। তারপর দেখি কে সাহস পায় নিতে…ক্ষমতা। তিনি আরও বলেন, সব গুছিয়ে দেওয়ার পরে এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা, পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি তো শুনতে রাজি না।
শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশের রিজার্ভ নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি এ দেশে আজকে না; ৭৭ বছর বয়স। সেই ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। তাহলে আমার রাজনীতির বয়স কত? স্কুলজীবন থেকে মিছিল করা শুরু করেছি। এ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। মা, বাবা, ভাই, বোন—সব হারিয়েছি। হারাবারও কিছু নাই। আমি এখানে কিছু পেতে আসিনি, নিতেও আসিনি।
বাংলাদেশে উন্নয়ন বাতাসে হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে একটা দেশ মর্যাদা পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আগে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিটকাত। এখন সিটকায় না। বাংলাদেশ শুনলে একটা আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা মাথায় রাখতে হবে। এটা বাতাসে হয়নি।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করেছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাবমূর্তির উজ্জ্বল করেছি। যে কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। যদি এত বেশি কথা হয়…যখন সরকার গঠন করেছিলাম, তখন যত ছিল, ওইখানে এনে রেখে আবার ইলেকশন করব। করে আবার বাড়াব। কিন্তু ওইখানে নিয়ে এসে দেখাব, এ-ই ছিল! বিদ্যুৎ শতভাগ কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসব? সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেয়, তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আবার আক্কেলটা ঠিক হবে যে এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেব?
বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই আর ভর্তুকির সুযোগটা নিচ্ছে অর্থশালী-বড়লোকেরা—এমনটা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে একটা স্লট ঠিক করব এখন থেকে যে কত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তাদের জন্য এক দাম আর তার থেকে যারা বেশি ব্যবহার করবে, তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, ওইভাবে কয়েকটা স্লট করে করে আমরা দেব। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। সেইভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। এটার ওপর কাজ চলছে, এভাবে আমরা করে দেব।
তবে রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় আমাদের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। যোগাযোগ বন্ধ ছিল। যাতায়াত বন্ধ ছিল। সবকিছু বন্ধ ছিল। যার জন্য রিজার্ভ বেড়েছিল। এরপর অর্থনীতি খুলে গেল। সমস্ত জিনিস আমদানি শুরু হলো। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রিজার্ভ কমবে, এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তার আগে তো অনেক আঁতেল ক্ষমতায় ছিল। জ্ঞানীগুণীরা ছিল। রিজার্ভ কত ছিল? রিজার্ভ কত ছিল তখন? এক বিলিয়নও ছিল না! জিরো পয়েন্ট সেভেন সেভেন মিলিয়ন ছিল। আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি, রিজার্ভ কত ছিল। বোধ হয় আড়াই মিলিয়ন, নট বিলিয়ন, ইভেন বিলিয়নের ধারেকাছেও নাই। যেটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারের সময় করেছি।
‘এখন দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে…যদি বলেন রিজার্ভ বাড়াতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিই। পানি দেওয়া বন্ধ করে দিই। স্যার বন্ধ করে দিই। সব বন্ধ করে বসিয়ে রাখলে রিজার্ভ ভালো থাকবে। রিজার্ভটা বেশি রাখা প্রয়োজন, না আমাদের দেশের মানুষের কমফোর্ট, দেশের মানুষের জন্য ভালো–মন্দ কাজ করা, কোনটা প্রয়োজন?’ এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। ৮০০ ডলারের পরিবহন খরচ এখন ৩ হাজার, ৪ হাজার ডলার লাগছে। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। আমরা নিজেরা উৎপাদন করব, নিজেরা খাব। নিজেরা চলব।