আনসার বাহিনীর সদস্যদের পে-স্কেলের আওতায় আনার দাবি জানালেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ আনসার ভিডিপির রয়েছে একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৭১ সালে আমাদেরকে চির পদাবনত করার জন্য পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের দখলদার বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। তখন যারা এই দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষে একত্রিত হয়ে দখলদার বাহিনীকে এ দেশ থেকে চিরতরে হটিয়ে দেওয়ার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল তাদের অন্যতম প্রধান একটি বাহিনী হচ্ছে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত আনসার বাহিনী। আনসার বাহিনী ৪০ হাজার অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, শুধু তা-ই নয়। ইতিহাসের স্বাক্ষর একেবারে চিরায়ত করে রাখার জন্য যে কাজটি তারা করে গেছে, সেটি তুলনাহীন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার চার সহযোগীকে নিয়ে আমাদের যে সরকার গঠন হয়েছিল, যে সরকার যুদ্ধটি পরিচালনা করেছিল, সেই সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়ার সৌভাগ্য আনসার বাহিনীর হয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা আয়োজিত জেলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে ৯ জন কর্মকর্তা, ৪ জন কর্মচারী ও ৬৫৭ জন সাধারণ সদস্য স্বাধীনতার বেদীমূলে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। বিশাল বিষয়। দুর্ভাগ্য হলো আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা গ্রামেগঞ্জে কাজ করেন তাদেরকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হয় না। আজকের অনুষ্ঠান থেকে একজন জনপ্রতিনিধি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, আপনারা রাষ্ট্রের এই দেশপ্রেমিক বাহিনীটির সদস্যদের জন্য নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন এবং তাদেরকে একটি পে-স্কেলের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি আমাকে জানালেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। সুইজারল্যান্ড এমন একটি রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রে মানুষের কল্যাণে কাজ করা হয়। বঙ্গবন্ধু এমনই একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের ব্যত্যয় ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা, তাঁর মহীয়সী পত্নী ও পুত্রদের হত্যার মধ্য দিয়ে। সেই ব্যত্যয় থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ এখন তৃতীয় টার্মিনাল করে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ বঙ্গের সাথে কার্যকর রেল যোগাযোগ স্থাপন করছেন। বিশাল কর্মযজ্ঞ পদ্মা সেতু, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছি।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কোথায় গিয়েছে বাংলাদেশ? আমরা ছিলাম এমন একটি দেশ, যে দেশটিকে নিয়ে বিশ্ব মাতব্বরেরা আশাবাদী ছিলেন না। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি, এখানে কোনো উন্নয়ন হবে না। কিন্তু যখনই তিনি একথা বলেছিলেন, তখনই এদেশে উন্নয়ন হয়েছে। সেই সময় মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু দরিদ্র দেশের তালিকা থেকে এদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে ছিলেন। স্বাধীনতার পরে আমাদের ব্যাংকে কোনো রিজার্ভ ছিল না, সেই অবস্থা থেকে আমরা উঠে এসেছি। আমাদের কোনো রেল যোগাযোগ ছিল না, সড়ক যোগাযোগ ছিল না, সমস্ত কিছু ভাঙা ছিল। সবকিছু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুননির্মাণ করেছিলেন।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কুমিল্লা রেঞ্জের পরিচালক ও রেঞ্জ কমান্ডার মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেলেনা পারভীন।

শেয়ার করুন