চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শুরু থেকেই ঋণ পরিশোধে জোর দিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া আগের ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিয়ে।
সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের ঋণ পরিশোধে এ কৌশল নিয়েছে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য ঘাটতিতে পড়তে পারে। বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল। এসব ঋণের সিংহভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছিল।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের সুদ ব্যয় কমাতে নানা কড়াকড়ি করা হয়। এতে সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমেছে। চাপ সামাল দিতে এখন ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। তাছাড়া বিশ্ব বাজারে তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর ব্যাংক খাত থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের ঋণ বাবদ সরকার মোট ২৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এ ঋণ পরিশোধে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রায় ২৫ হাজার ৭০৯ কোটি টাকার নতুন ঋণ নিয়েছে।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন (জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকের বাইরে থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। আলোচিত (প্রথম তিন মাস) সময়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক অবস্থানে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে।
বর্তমানে মোট ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে সরকারের ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
জুন প্রান্তিক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সেটি বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই (জুলাই-আগস্ট) সময়ে ছিল ৪০১ কোটি টাকা। হিসাবে দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা প্রায় ১৪ গুণ। যদিও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
আর চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপরে নির্ভরতা বাড়িয়েছে সরকার।