আজ শনিবার থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়। ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পিতৃপক্ষ শেষে শুরু হয় দেবীপক্ষ। চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবী দুর্গাকে জানানো হয় আবাহন। চন্ডীপাঠ ছাড়াও বিভিন্ন মন্দির ও মন্ডপে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মূলত মহালয়া মানেই দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যাওয়া।
মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাণে আছে, দুর্গোৎসবের তিনটি পর্ব- মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলে অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেন এবং বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চান। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে সিংহবাহিনী নিয়ে দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করেন।
মহালয়া কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অবস্থাকে বলা হয় মহালয়া। এ ব্যাপারে অবশ্য মতান্তর রয়েছে। ‘মহ’ শব্দটির অর্থ ‘পূজা’, আবার ‘মহ’ বলতে উৎসবও বোঝায়। এ ছাড়া মহালয়া বলতে বোঝা
যায় ‘মহান’ ও ‘আলয়’ নিয়ে মহালয়া। এর সঙ্গে ‘আ’ যোগ করে পূজার ‘আলয়’। ‘আলয়’ শব্দের অর্থ ‘আশ্রয়’। আবার মহালয় বলতে বোঝা যায় পিতৃলোককে, যেখানে স্বর্গত পিতৃপুরুষদের অবস্থান। মহালয়ার ভোর থেকেই শুরু হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা।
সনাতন ধর্মে বলা হয়, পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। মৃত আত্মীয়পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন অনেকে। পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল-তিল-অন্ন উৎসর্গ করে তর্পণ করা হয়।
মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজা কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজা মন্ডপে, ঢাকাস্থ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামন্ডপে ভোর থেকেই চন্ডীপাঠ, চন্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন করা হয়।