হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যা বলছে

মত ও পথ ডেস্ক

ছবি : বিবিসি

মধ্যপ্রাচ্যে সপ্তাহজুড়ে যা চলছে, সেটা নজিরবিহীন। ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের লড়াইয়ে দুই পক্ষে ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। আহত কয়েক গুণ বেশি। ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে এ লড়াইয়ের শুরু হয়। এখন সপ্তাহজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে গাজা উপত্যকা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। জোরদার করেছেন হামলা। ইসরায়েলি হামলার ভয়ে অবরুদ্ধ গাজার চার লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থীশিবিরে। সেখানেও চলছে অভিযান।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত। ইরানসহ মুসলিম বিশ্বের অনেকেই হামাসের পক্ষে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও এ নিয়ে বিভক্তি আছে। যেমন ভারত ও নেপাল ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের কার্যক্রমকে সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে উল্লেখ করেছে। শ্রীলঙ্কা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খবর ডিপ্লোম্যাটের।

বাংলাদেশ চলমান সশস্ত্র সংঘাতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, সংকট নিরসনে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ইসরায়েলি দখলদারত্বের অধীনে বসবাস কিংবা ক্রমবর্ধমান বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া ফিলিস্তিনে শান্তির পথে অন্তরায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের হাজারো মানুষ ফিলিস্তিনিদের ওপর অন্যায় দখলদারত্ব ও নৃশংসতা বন্ধের দাবি তুলেছেন। গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে চারটির (নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান) সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১০ নেপালি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আটকে পড়া ২৫৩ নেপালিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভারত সরকার আটকে পড়া নিজেদের নাগরিকদের ইসরায়েল থেকে দেশে ফেরাতে ‘অপারেশন অজয়’ বাস্তবায়ন করছে।

ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেছেন। মোদি লিখেছেন, ‘এটা সন্ত্রাসী হামলা। আমি এই হামলার খবর পেয়ে গভীরভাবে শোকাহত। ভারত ইসরায়েলের পাশে রয়েছে।’

১৯৯২ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভারত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। ভারতের বেশ বড় সামরিক অংশীদার এখন ইসরায়েল।

বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, নরেন্দ্র মোদি আর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতিভাবনা ও মুসলিমবিরোধী মনোভাব অনেকটা একই রকমের। এসব মিল দুজনকে কাছাকাছি এনেছে। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারত নিজের অবস্থান বদলেছে। ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে অবস্থান বদলায়নি দিল্লি। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের শান্তিতে বসবাস করতে হবে।

নিজেদের নাগরিকদের মৃত্যুর খবর জানানোর পাশাপাশি হামাসের আক্রমণকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে নেপাল সরকার। তবে সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে শান্তির প্রতি অটল থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা প্রথম দিককার দেশগুলোর একটি নেপাল। শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলে আসছে কাঠমান্ডু। তবে ফিলিস্তিনি হামাসের কার্যক্রম কিংবা যে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সমর্থন করে না নেপাল।

পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। নৃশংস ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে কলম্বো। শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে, মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার টেকসই সমাধানে ১৯৬৭ সালে নির্ধারণ করা সীমানার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের মীমাংসা করতে হবে।

পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত সমস্যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। তবে সার্বভৌম ও কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ইসলামাবাদ। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার বলেছে, চলমান সংঘাত ইসরায়েলি ইহুদিদের পক্ষ থেকে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে পদদলিত করা এবং বারবার মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি অবমাননা ও অসম্মানের ফল।

ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের কার্যক্রমকে ভারত ও নেপাল সরাসরি ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ এবারের সংঘাতের ঘটনায় হামাসকে সরাসরি দোষারোপ করা থেকে বিরত রয়েছে।

শেয়ার করুন