মুঠোফোনে তিনদিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে থাকছে না। অর্থাৎ শনিবার মধ্যরাত থেকে তিনদিনের প্যাকেজ কিনতে পারবেন না গ্রাহকেরা। এখন থেকে মানুষকে অন্তত সাতদিন মেয়াদি প্যাকেজ কিনতে হবে। সাতদিনের প্যাকেজের দাম তিনদিন মেয়াদি প্যাকেজের চেয়ে বেশি। ফলে মানুষের ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছে অপারেটরগুলো।
যেমন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে শনিবার রাতে দেখা যায়, তিনদিন মেয়াদের এক গিগাবিট (জিবি) ডেটার প্যাকেজের দাম ৪৬ টাকা। রোববার থেকে আর তিনদিনের প্যাকেজ কেনা যাবে না। সাতদিন মেয়াদে তিন জিবি ডেটা কিনতে ব্যয় হবে ১২৯ টাকা।
মোবাইল অপারেটরগুলো বলছে, তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে অনীহা তৈরি হতে পারে। কারণ, একসঙ্গে ইন্টারনেটের পেছনে বেশ বড় অঙ্কের ব্যয় (স্বল্প আয়ের মানুষের পরিপ্রেক্ষিতে) করার সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের একাংশ ডেটা কেনা বাদ দেবেন।
যাদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একেবারেই জরুরি, তারা বাড়তি ব্যয় করে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন। প্রয়োজন না থাকলেও অনেক মানুষকে বেশি মেয়াদের বেশি দামি প্যাকেজ কিনতে হবে।
অপারেটরদের হিসাবে, মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৯ শতাংশের বেশি ৩ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করেন। দেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১২ কোটি। উল্লেখ্য, কেউ সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই তাকে একজন গ্রাহক ধরা হয়।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ৮ অক্টোবর এক মতবিনিময় সভায় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের দামের চাপে রয়েছেন। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই আপাতত তিনদিনের প্যাকেজ বন্ধ করা সমীচীন হবে না।
মোবাইল অপারেটরেরা এ ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর মিনিপ্যাকের উদাহরণ সামনে এনেছে। তারা বলছে, ছোট ছোট প্যাকেটে শ্যাম্পু বিক্রি হয় বলেই স্বল্প আয়ের মানুষ তা কিনতে পারেন।
নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার প্রসঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, তিনদিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহকদের অতিরিক্ত দামে ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে। আর্থিক কারণে যারা কম মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, সরকার ও অপারেটর-উভয়েরই আর্থিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহকও কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইন্টারনেট প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকায় শুধু ৭ ও ৩০ দিন মেয়াদি প্যাকেজ রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে থাকতে পারবে অনির্দিষ্ট মেয়াদের (আনলিমিটেড) প্যাকেজ। মোট ৪০টি প্যাকেজ দিতে পারবে অপারেটররা। এত দিন ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও অনির্দিষ্ট মেয়াদের প্যাকেজ ছিল। অপারেটরগুলো মোট ৯৫টি প্যাকেজ দিতে পারত।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির যুক্তি হলো, বেশিসংখ্যক প্যাকেজের কারণে গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত হন। অল্প মেয়াদের প্যাকেজের কারণে অসচেতন গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্তও হন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, মেয়াদের চক্র ও প্যাকেজের চক্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা করা। লাভ কমে যাচ্ছে বলেই অপারেটররা তিনদিনের মেয়াদ চাচ্ছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেয়াদ, অসংখ্য প্যাকেজে গ্রাহক বিভ্রান্ত হয়েছেন। নতুন নির্দেশিকা গ্রহণযোগ্য।
ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিটিআরসি গত ২৫ মে থেকে ১২ জুন অনলাইনে একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে ১ হাজার ৬৭৫ গ্রাহক অংশ নেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ গ্রাহক মেয়াদ ৭ ও ৩০ দিন এবং অসীম করার পক্ষে ছিলেন।
অবশ্য অপারেটরগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি, ৪৫ শতাংশ গ্রাহক তিনদিনের প্যাকেজ থাকার পক্ষে ছিলেন। তাদের প্রয়োজনটি উপেক্ষা করা হয়েছে। জরিপটি নিয়েও তারা কিছু আপত্তি করেছে।