আমরা দুই হাতে টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালকে আরো আধুনিক ও উন্নত করা হবে। আমরা যদি ভবিষ্যতে জাতির সেবা করার আর একটি সুযোগ পাই, ইনশাআল্লাহ, আমরা স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ) এবং প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের আরো উন্নয়ন করব।

universel cardiac hospital

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায়ে ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি একই অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও পুনঃখননকৃত ৪৩০টি ছোট নদী-খাল-জলায়ের উদ্বোধন এবং নতুন অনুমোদিত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটিকে ৪ থেকে ৫ হাজার শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলব। কভিড-১৯ না এলে এবারই তার সরকার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করে ফেলত।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় এবং রিজার্ভে টাকা জমা পড়ায় আমরা দুই হাতে টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচিয়েছি। এসব খাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় অনেক কাজ আমরা শুরু করতে পারিনি। ইনশাল্লাহ, আগামীতে সুযোগ পেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে যেমন উন্নত করব তেমনি প্রত্যেকটি জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোকে আমরা আরো উন্নত করব।

‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায়ে এদিন ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ উদ্বোধনসহ দেশে এখন ২০০টি ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এরফলে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখন চক্ষুসেবা পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০ লাখ জনগণের সেবা গ্রহণ করেছে। ফলে অকাল অন্ধত্ব থেকে অনেকেই মুক্তি পেয়েছে, অনেক দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চশমা সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে এই সেবার ব্যবস্থা করা হবে।

বিএনপির চিন্তার দৈন্যতা ও স্বার্থপরতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। এগুলোতে যারা চিকিৎসা নেবে তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পারে সে আতংকে খালেদা জিয়া ২০০১ পরবর্তী সময় ক্ষমতায় এসে জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে ৯৬ পরবর্তী সময়ে তার সরকার প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন সারাদেশে ৫ হাজারের অধিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেখান থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদানসহ নানা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে আর কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে কোনো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠা করার সময় বিএনপির ডাক্তারদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু দেশে এখন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ মোট ৫টি মেডিক্যাল বিশ্বদ্যিালয় রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক বিভাগেই একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। কারণ আমাদের ডাক্তার, নার্স ও দক্ষ জনশক্তির পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণারও প্রয়োজন। সেজন্য আলাদা ফান্ডও দেওয়া হয়েছে।

৯৬ থেকে এ পর্যন্ত তাঁর সরকার বেশকিছু বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল গড়ে তুলেছে যার ফলে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে তেমনি মানুষ সেবা ও চিকিৎসা পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, নৌ পথ, রেলপথ, আকাশপথসহ বিভিন্ন খাতে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তার জন্য আমি জনগণের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তারাই বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসীন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই আপনারা এদেশে স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে এই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। দারিদ্রের হার ৪১ ভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এবং হত দরিদ্রের হার ২৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ইনশাল্লাহ আগামীতে এদেশে কেউ আর হত দরিদ্র বা ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি জীবন মানের উন্নয়নের ব্যবস্থা সরকার করেছে।

তিনি তার সরকারের প্রয়াসে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উল্লেখ করে এগুলো ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন এবং তার সরকারের করে দেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সকল শ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়ে নজরদারি করার আহ্বান জানান।

যশোরের শার্শা উপজেলা, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সংশ্লিষ্টরা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বিত ‘জয়যাত্রা’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর দুটি পৃথক ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

সূত্র : বাসস

শেয়ার করুন