বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে ভারত একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের (আইএসএ) ডিরেক্টর জেনারেল ড. অজয় মাথুর।
সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা একসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, বিনিয়োগ সংগঠিত করা ও সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর আশা করছি।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংস্থাটির হরিয়ানার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় একথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ সরকার নিজেদের জন্য একটি জাতীয় সৌরশক্তি রোডম্যাপ তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে একটি সোলার টেকনোলজি অ্যাপ্লিকেশন রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সৌরশক্তির সক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল ড. অজয় মাথুর বলেন, ২০১৬ সালে সদস্য দেশ হিসেবে যোগদানের পর বাংলাদেশ আইএসএ-র প্রথম দিকের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করছি। দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সৌরশক্তি ব্যবহার ও সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা গড়ে তোলার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ সহায়তা এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, সৌরশক্তি দ্রুত সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে সৌরশক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সৌরশক্তি প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বিশেষত রুফটপ সৌরশক্তি ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
‘এই সহযোগিতার ছাতার তলায় বাংলাদেশ মজুতযোগ্য সৌর প্রকল্পের পাইপলাইন তৈরি ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কাজ করছে। নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মাধ্যমে সৌর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্ভব। এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ ও বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ প্ল্যান পরিকল্পনা ২০২১-৪১-এ বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
অজয় মাথুর বলেন, এই অংশীদারত্ব এসডিজি-৭ (অ্যাকসেস টু এনার্জি) ও এসজিডি-১৩ (জলবায়ু পরিবর্তন), প্যারিস চুক্তিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে চিহ্নিত বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকির জন্য একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্ভাবনী প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, একাধিক অ্যাপ্লিকেশনসহ পোর্টেবল সোলার সিস্টেম, সৌর সেচপাম্প, সৌর ধান থ্রেশার মেশিন, সৌরশক্তিচালিত পানীয় জল প্ল্যান্ট এবং সৌরচালিত ফ্লাড গেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে আইএসএ। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সোলারাইজেশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সোলারাইজেশন ও ভাসমান সোলার প্রকল্প বিবেচনাধীন।
আইএসএ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতা বাংলাদেশে সৌরশক্তি খাতকে ত্বরান্বিত করবে, বিনিয়োগ সংগঠিত করবে ও সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে জানিয়ে অজয় মাথুর বলেন, এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় নীতির অগ্রাধিকার ও অব্যাহত উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা ভবিষ্যতে পরিচ্ছন্ন ও অব্যাহত জ্বালানি প্রচারে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোটের অভিন্ন অঙ্গীকার প্রতিফলিত করবে।
এর আগে সংস্থাটির চিফ অব অপারেশন্স জশুয়া উইক্লিফ আইএসএ সম্পর্কে বক্তব্য দেন। পরে প্রোগ্রাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন ক্লাস্টারের প্রধান একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আইএসএ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন।
আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট
ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স ১০৯টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এটি বিশ্বব্যাপী এনার্জি অ্যাক্সেস ও নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করে। কার্বন-নিরপেক্ষ ভবিষ্যৎ রূপান্তরের উপায় হিসেবে সৌরশক্তিকে দৃঢ় করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে। আইএসএর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সৌরশক্তিতে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থব্যয় কমানো।
এটি কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।