ইইউর মানবাধিকার পুরস্কারে ভূষিত মাহসা আমিনি

মত ও পথ ডেস্ক

মাহসা আমিনির ছবি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ। পুরোনো ছবি (সংগৃহীত)

ইরানের তরুণী মাহসা আমিনিকে মরণোত্তর মানবাধিকার পুরস্কারে ভূষিত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ হেফাজতে মারা যান তিনি। মাহসার মৃত্যুর জেরে ইরানে শুরু হওয়া ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনও যৌথভাবে এই সর্বোচ্চ মানবাধিকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

শাখারভ পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার ইউরো। আগামী ডিসেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। খবর বিবিসির।

universel cardiac hospital

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ মাহসা আমিনিকে আটক করেছিল। ইরানের কঠোর ইসলামী পোশাকবিধি অমান্য করার অভিযোগ করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। আটকের পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশি হেফাজতে মারা যান।

পরিবার ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সাকেজ শহরে কুর্দি বংশোদ্ভূত নারী মাহসা আমিনিকে সঠিক নিয়মে হিজাব না পরায় গ্রেপ্তার করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। গ্রেপ্তার অবস্থায় মাহসা আমিনিকে মারধর করা হয়েছিল। পরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে মারা যান তিনি।

তবে ইরানি কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে থেকে থাকা অজ্ঞাত স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি মারা যান।

মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদের ইরানে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কয়েক মাস ধরে লাগাতার বিক্ষোভের মুখে দেশটির নৈতিকতা পুলিশের কার্যক্রম শিথিল করে ইরান সরকার। মানবাধিকার কর্মীদের অনুমান, কয়েক মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে ৪০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ১৮ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। মাহসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভের জেরে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দেশটির শাসকগোষ্ঠী।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানি নারীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানায়। ফলে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ শীর্ষক আন্দোলন বৈশ্বিক রূপ নেয়। তারা ইরানের নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের আহ্বান জানায়। বিক্ষোভে দমন-পীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ইরানি ব্যক্তি-সংস্থার ওপর গত বছর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ।

মাহসা ও ইরানি নারীদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে সংহতি-সমর্থন, সে বিষয়ে আরও দৃঢ় বার্তা দিল এবারের শাখারভ পুরস্কার। সম্মানজনক এই পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা আছেন। আছেন পাকিস্তানের নারী অধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস ইরানের তরুণী মাহসা আমিনিকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়। ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় উঠে আসে মাহসা আমিনির নাম।

শেয়ার করুন