ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জিততে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র এখন আরও বেশি শক্তিশালী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এছাড়া আমেরিকা এখনও সারা বিশ্বের জন্য একটি বাতিঘর বলেও মন্তব্য করেছেন মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ইসরায়েল এবং ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিয়েও কথা বলেন।
এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হামাস ও ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও এক কাতারে ফেলেন বাইডেন।
বিবিসি বলছে, ফিলিস্তিনি হামাস গ্রুপকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তুলনা করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি বলেন, ‘হামাস এবং পুতিন ভিন্ন ভিন্ন হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু তাদের লক্ষ্য একই: তারা উভয়ই প্রতিবেশী গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে চায়।’
বাইডেন দাবি করেন, ‘ইউক্রেনের প্রকৃত রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার যে অধিকার আছে সেটিই অস্বীকার করেছেন পুতিন।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সরাসরি আমেরিকান জনগণকে সম্বোধন করে বলেন: ‘আমি জানি এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতগুলো আমেরিকানদের জন্য অনেক দূরের ঘটনা বলে মনে করা হয়ে থাকে এবং এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা স্বাভাবিক, কেন এই সংঘাত আমেরিকানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে?’
তার দাবি, ‘ইসরায়েল এবং ইউক্রেনের সফলতা নিশ্চিত করাটা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ইউক্রেনে দখলদারিত্বের জন্য পুতিনের ক্ষুধা বন্ধ করতে না পারি তবে তিনি নিজেকে আর ইউক্রেনের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।’
মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আগের চেয়ে শক্তিশালী। আমেরিকা বিশ্বের কাছে এখনও একটি আলোকবর্তিকা, এখনও।’
তিনি হামাস ও পুতিনকে জিততে দেবেন না বলেও জানান বাইডেন। এছাড়া জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য চলতি বছরের শুরুতে পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে গোপন সফরে গিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
ইউক্রেন ও গাজায় চলমান সংঘাত নিয়ে জো বাইডেন বলেন, ‘ঝুঁকি হচ্ছে চলমান সংঘর্ষ এবং বিশৃঙ্খলা বিশ্বের অন্যান্য অংশে… বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ‘একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করছে’। তার দাবি, সেই ভবিষ্যৎ হবে ‘আরও স্থিতিশীল’ এবং ‘প্রতিবেশীদের সাথে আরও বেশি সংযুক্ত’।
মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট বলছেন, ইসরায়েল এবং ইউক্রেনকে সাহায্য করতে অস্বীকার করাটা ‘কেবলই মূল্যহীন’। তার দাবি, ‘আমরা ইতিহাসের একটি পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছি। এটি সেই মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি যেখানে আমরা আজ যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা আগামী কয়েক দশকের ভবিষ্যতের রূপ দিতে চলেছে।’
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সব ধরনের ইসলামফোবিয়া বা ইসলাম-বিদ্বেষ এবং ইহুদি বিদ্বেষ প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তিনি মুসলিম এবং ইহুদি আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সবাই আমেরিকান।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলেরই বিতর্ক ও মতবিরোধ করার অধিকার আছে। তবে আমেরিকানদের অবশ্যই হিংসা ও বিদ্বেষ ত্যাগ করতে হবে এবং একে অপরকে সহযোগী আমেরিকান হিসাবে দেখতে হবে। মুসলিম, ইহুদি বা যে কারও বিরুদ্ধেই হোক না কেন আমরা সব ধরনের ঘৃণা প্রত্যাখ্যান করি।’
বাইডেনের ভাষায়, ‘বিশ্বের মহান জাতিগুলো ঠিক এটাই করে এবং আমরা একটি মহান জাতি।’