শারদীয় দুর্গোৎসব : দূরীভূত হোক সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতা

সম্পাদকীয়

দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজার প্রতীকী ছবি

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে ২০ অক্টোবর (শুক্রবার) বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের। দেবীর ‘দশ হাত’ ঐক্য বা সম্মিলিত শক্তির প্রতীক। অর্থাৎ দেবী দুর্গা সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, শুভ, সংহতি ও ঐক্যের প্রতীক। তাঁর যুদ্ধরতরূপ লোকশিক্ষার একটি দৃষ্টান্ত। এটি হচ্ছে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির যুদ্ধ, অন্যায়, অসত্য ও অনাচারের বিরুদ্ধে ন্যায়, সত্য ও সদাচারের সংগ্রাম। দুর্গাপূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা হিন্দুদের, কিন্তু মূলবাণী সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে নিবেদিত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এই চেতনাকে ধারণ করে সবার সুখ-শান্তি কামনায় এবং সর্বজীবের মঙ্গলার্থে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে নানা উপচার ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে শারদীয় দুর্গাপূজা। সর্বপ্রকার হীনতা, সংকীর্ণতা ও ধর্মান্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী-নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করে এবং অংশগ্রহণ করে আনন্দ-উৎসবে। সবাই মিলিত হয় অভিন্ন মোহনায়, অভিন্ন চেতনায়।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। যে কোনো উৎসব ধর্ম-বর্ণ-প্রথা ভেদাভেদ ভুলে পালন করতে জাতি হিসেবে বাঙালি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমান কাল থেকে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, ঈদে মিলাদুন্নবী, জন্মাষ্টমী, শারদীয় দুর্গোৎসব, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো বিশেষ ধর্মের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না, সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে উদযাপিত হয় প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব। যদিও অনেক সময় দেখা যায়, একশ্রেণির উগ্রগোষ্ঠী এসবের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সম্প্রীতিতে আঘাত করার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে; এ ধরনের কর্মকান্ড কোনো জাতির জন্যই মঙ্গলকর নয়। বিগত বছরগুলোতে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আর এ নির্বিঘ্নে পালনের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। আমরা মনে করি, নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভ্রাতৃত্ববোধেরও জাগরণ ঘটবে। সর্বত্র সুন্দরের অধিষ্ঠান ঘটবে। নিজেদের পারস্পরিক সুসম্পর্ক এবং পরম ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মধ্য দিয়ে পরাজিত হবে সব রকমের অপশক্তি।

পাশাপাশি শারদীয় দুর্গোৎসবের মাধ্যমে সর্বপ্রকার হীনতা, সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা, অজ্ঞানতা দূরীভূত হোক এবং বিনাশ হোক অন্তরের পশুত্ব ও আসুরিক শক্তির; বিনাশ হোক সব অশুভ শক্তির। জেগে উঠুক মানুষে মানুষে সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্ববোধ। রচিত হোক সম্প্রীতি ও মহামিলনের সেতুবন্ধ। নির্মল হোক সবার চিত্ত, সার্থক হোক শক্তি-সংহতি-কল্যাণ অন্বেষা। হিংস্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিনাশ ঘটে নবচেতনায় গড়ে উঠুক আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। শারদীয় দুর্গোৎসবে আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

শেয়ার করুন