দেবী দুর্গার আগমনের পর মহাসপ্তমী শেষ হয়েছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকালে দুর্গতিনাশিনী মা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজা শুরু হয়। আজ রোববার (২২ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী। আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হবে। এছাড়া দুপুর ১টায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ হবে।
অষ্টমীর দিনে সকাল ১১টায় রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। অষ্টমীর দিন বিশেষ আকর্ষণ থাকে কুমারী পূজা এবং সন্ধিপূজায়। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।
শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।
নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।
কুমারী পূজার তাৎপর্য প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাআনন্দ বলেন, আজ অনেক চিন্তাশীল মানুষ অনুভব করছেন, আধুনিক পৃথিবীতে সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট নিরসন করে অগ্রগামী হতে হলে মাতৃজাতির প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। জগতের অনেক স্থানে নারীকে সম্মান দেওয়া হয় পত্নীরূপে বা সহকারিণীরূপে। কিন্তু নারীর সবচেয়ে মহিমময় রূপ তার মাতৃরূপ। তাই এই মহাষ্টমী তিথিতে আমরা জগতের সব মাতৃজাতিকে উদ্দেশ্য করে কুমারী মাতাকে প্রণাম জানাই। তার মাধ্যমে আদ্যাশক্তিকে আমাদের প্রণাম নিবেদন করি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, অষ্টমীতে সকাল থেকেই পূজা হবে, অঞ্জলি প্রদান করা হবে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য। বিকালে সন্ধিপূজা হবে। সন্ধিপূজা দুর্গাপূজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এটি অসুরকে বধ করার সন্ধিক্ষণ।
অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দুসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। যদিও দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন– বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন— দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে আর আগামী মঙ্গলবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন এই একই বাহনে।
মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আগামী সোমবার (২৩ অক্টোবর) মহানবমী এবং মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমীর মাধ্যমে বিদায় নেবেন দুর্গা দেবী।
বিজয়া দশমীর দিন মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে পলাশীর মোড় থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা মণ্ডপের ছিল ৩২ হাজার ১৬৮। এবার এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮। ঢাকা মহানগরে পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৪৫, গত বছর ছিল ২৪২। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে।
শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করতে ঢাকার ২৪৬টি পূজামণ্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখতে ২৫টি নির্দেশনা দিয়েছে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি।