আমরা জানি, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের প্রায়োগিক কাজে লাগানোর উপায়ই হলো প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মানুষ তার উন্নয়নকাজে ব্যবহার করছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর যেসব আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো হলো– রেডিও, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, টিভি, ল্যাপটপ, ট্যাব, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট সিস্টেম ইত্যাদি। বর্তমানে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র। সারাবিশ্বে, জীবনের প্রতি মূহূর্তে দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রযুক্তি।
গান শোনা, ছবি তোলা, সিনেমা-নাটক দেখা, ভিডিও করা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, লেখালেখি, নাগরিক সভ্যতা; শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প, মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটন, পরিবেশ, আবহাওয়া, ব্যাংক– সর্বত্র প্রযুক্তির প্রসার। মোটকথা আমরা প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছি। সামান্য সময়ের জন্যও প্রযুক্তি ছাড়া চলতে পারি না। ব্যক্তিগত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে প্রযুক্তি। জ্ঞানচর্চায় প্রতিটি দেশের মানুষ ও দেশকে সমৃদ্ধ ও সম্পদশালী করেছে। এনে দিয়েছে পরিবর্তন।
পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। ঘটেছে অসাধারণ বিপ্লব। প্রযুক্তিনির্ভর এসব যন্ত্র প্রায় সবার বাড়িতেই আছে। প্রাপ্তবয়স্করা সারাদিন ব্যস্ত মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নিয়ে। শিশুরা থাকছে একা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্গদানে অপারগতায় অভিভাবকরা তাদের হাতেও তুলে দিচ্ছে স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ। ফলে ছোটরাও প্রযুক্তির হাতে বন্দি। আর আধুনিক জীবনযাপনের তাগিদে আমাদের প্রায় সবারই প্রযুক্তির প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা বা মোহ তৈরি হয়েছে। তবে অন্ধ ভালোবাসা অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে হিতে বিপরীত। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও প্রযুক্তিতে আসক্ত। আধুনিক ডিভাইসের কোনোটাই শিশুদের অজানা নেই। তবে এই আসক্তি বড়দের জন্য যেমন সমস্যার কারণ; ছোটদের বেলায় তা ভয়ঙ্কর। কারণ মাত্রারিক্ত এসব যন্ত্র ব্যবহারের ফলে মানুষ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রেডিয়েশনের ফলে ধীরে ধীরে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো কাজে আগ্রহ নাই। কায়িক পরিশ্রম, খেলাধুলায় অনাগ্রহ। পরিকল্পনা ও উচ্চতর চিন্তা থেকে দূরে থাকছে মানুষ। ঘুমের ওপর চাপ পড়ছে; প্রেশার বাড়ছে, হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। বিরতিহীন গেম খেলা ও এসব যন্ত্র ব্যবহারের কারণে খিঁচুনি বা স্নায়ুরোগ দেখা দিচ্ছে। আত্মবিশ্বাস কমছে।
শিশুরা যে গতিতে প্রযুক্তির সঙ্গে চলছে, তা কি রোধ করতে হবে? তা করা ঠিক হবে না। সে জন্য ইন্টারনেট ডায়েট জরুরি। প্রযুক্তির মন্দ দিকগুলো থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। তার জন্য পরিবারকে হতে হবে সচেতন। তাদের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ রাখতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অবাধে ব্যবহার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল্ড ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। এতে শিশু কী দেখছে, তার ওপর অভিভাবক নজরদারি করতে পারবেন। চাইল্ড ভার্সন নামে একটি অপশন আছে। এই অ্যাকাউন্টের ব্যবহারে শিশুরা কী করছে, অভিভাবকরা তদারকি করতে পারবেন। শিশুর সঙ্গে অভিভাবককেও ইন্টারনেট ব্যবহারে অংশ নিতে হবে। শিক্ষামূলক বিষয় দেখতে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি সতর্ক হতে হবে আপনি কী দেখছেন, সে বিষয়েও।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মাদার বখ্শ্ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, রাজশাহী