গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ভূখণ্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামাসের হামলার জবাবে পাল্টা রকেট ও বোমা হামলা করে ইসরায়েলের সশস্র বাহিনী। এরই মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎসহ খাদ্য, পানি ও জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েল আল-আহলি হাসপাতালে বোমা হামলা চালালে পাঁচ শতাধিক নিরপরাধ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান। যদিও তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে এবং আহত হয়ে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বলতে হচ্ছে, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর বছরের পর বছর দখলদার ইসরায়েলিদের হত্যাযজ্ঞ, সীমাহীন আমানবিক নির্যাতনের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তারা প্রতিরোধ করবে- এটিই স্বাভাবিক। নিরীহ ফিলিস্তিনিরা এখন মুক্তি চায়। তাদের নিজেদের ভূমিতে স্বাধীনভাবে মাথা উচু করে বাঁচতে চায়।
ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত। ফিলিস্তিন অঞ্চলটি পৃথিবীর প্রাচীন অঞ্চলগুলোর অন্যতম। এর আয়তন ১০ হাজার ৪২৯ বর্গমাইল। ফিলিস্তিন ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্যের অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ব্রিটিশদের অধিকারভুক্ত হয় ফিলিস্তিন। তখন বিশ্বে ইহুদিদের নিজস্ব কোনো দেশ ছিল না। তারা চেয়েছিল নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। আর ইহুদিরা বিশ্বাস করে, ফিলিস্তিন হলো তাদের জন্য ঈশ্বর প্রতিশ্রুত ভূমি। তাই তারা ফিলিস্তিনকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্থান হিসেবে বেছে নেয়! এদিকে, ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে দুটি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য। ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ৮-১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের মোট জমির ৫৫ শতাংশ দেওয়ার প্রস্তাব পাস হয়। অথচ আরবদের জনসংখ্যা ও জমির মালিকানা ছিল ইহুদিদের দ্বিগুণ। তাই আরবরা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। অবশ্য এর আগেই তৎকালীন ইহুদি নেতারা ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জন্ম নেয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল।
সম্প্রতি ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়ে দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং দক্ষিণ গাজার ১০ লক্ষাধিক বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। আর সম্ভাব্য স্থল অভিযানে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ধারণা করা কঠিন।
আমরা মনে করি, ইসরায়েলের এই মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর ভূমিকা নেওয়ার পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। কেননা দ্বি-রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হলেই এই অঞ্চলে ফিরবে প্রকৃত শান্তির হাওয়া।