ব্যর্থতার ষোলোকলা যেন পূর্ণ হলো। দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছেও হেরে বসলো সাকিবরা। সেটাও আবার ভালো খেলে নয়, লজ্জাজনক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে।
ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশকে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর আর জয় পায়নি।
টাইগারদের ওপেনিংয়ের দুর্দশা যেন শেষ হওয়ার নয়। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশের লক্ষ্যও খুব বড় নয়, ২৩০ রানের। কিন্তু ওপেনিং জুটি কোনো এক অদৃশ্য চাপে ১৯ রানেই ভেঙে পড়লো। সেই শুরু।
১২ বল ৩ রান করে সাজঘরে ফিরলেন লিটন দাস। ডাচ স্পিনার আরিয়ান দত্তের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল গ্লাভসে লেগে উঠে যায় ওপরে, উইকেটরক্ষক নেন সহজ ক্যাচ।
পরের ওভারে তানজিদ হাসান তামিমও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। পেসার ফন বিকের বলে পুল করতে চেয়েছিলেন। বল ব্যাটে আলতো ছোঁয়া লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ১৬ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৫ করেন তামিম।
বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। গত এক বছর ব্যাটে ধারাবাহিকতা দেখালেও বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে হচ্ছেন ব্যর্থ।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আজ শান্ত আউট হয়েছেন ১৮ বলে ৯ রান করে, পল ফন ম্যাকেরনের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিশ্বকাপে টানা পঞ্চম ম্যাচে দশের নিচে আউট হলেন শান্ত।
সাকিব আল হাসান মাঝে দুদিন এসে দেশে ছেলেবেলার মেন্টরের কাছে ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেন না মাঠে। আরও একবার ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ অধিনায়ক।
১৪ বলে ৫ রান করে ফন ম্যাকেরনের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। মেহেদী হাসান মিরাজ সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৪০ বলে ৩৫ করা এই অলরাউন্ডারকে তুলে নেন বেস ডি লিডি।
ভরসা ছিল মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমের ওপর। কিন্তু মুশফিক এবার হতাশ করলেন। ৫ বলে মাত্র ১ করে বোল্ড হলেন ম্যাকেরনের বলে। ৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর শেখ মেহেদি হাসান ৩৮ রানের জুটি গড়ে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন। শেখ মেহেদি রানআউট হন ৩৮ বলে ১৭ করে।
শেষ ভরসা ছিলেন কেবল মাহমুদউল্লাহ। তিনিও আউট হয়ে যান তিন ওভার পরই। ৪১ বলে ২ বাউন্ডারিতে তার ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। বাংলাদেশের হারও নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষদিকে মোস্তাফিজুর রহমান ৩৫ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ২০ আর তাসকিন আহমেদ ৩৫ বলে করেন ১১ রান। ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
ডাচ বোলারদের মধ্যে পল ফন ম্যাকেরন ২৩ রানে ৪টি আর বেস ডি লিডি ২৫ রানে ২টি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে ৪৫তম ওভারে ৫ উইকেটে নেদারল্যান্ডসের ছিল ১৮৫ রান। স্কট অ্যাডওয়ার্সের ফিফটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ডাচরা। তবে সেখান থেকে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। ৯ রানের মধ্যে তুলে নেয় ৩টি উইকেট।
৮ উইকেটে যখন ১৯৪, মনে হচ্ছিল দুইশর আগেই অলআউট হতে পারে নেদারল্যান্ডস। সেটা হয়নি। তারপরও ডাচদের অল্পতে আটকে দেওয়ার সুযোগ ছিল। ৪৯ ওভার শেষে নেদারল্যান্ডসের রান ছিল ৯ উইকেটে ২১২।
কিন্তু শেষ ওভারে শেখ মেহেদি হাসান উদার হস্তে রান দিলেন। এক ওভারেই ১৭ রান তুলে লড়াকু পুঁজি দাঁড় করিয়ে ফেলে নেদারল্যান্ডস। পুরো ৫০ ওভার খেলে ২২৯ রানে অলআউট হয় ডাচরা।
অথচ ইডেন গার্ডেনে টস জিতে ব্যাট করতে নামা ডাচদের শুরুতেই চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলামের আগুনে বোলিংয়ের মুখে পড়ে নেদারল্যান্ডস।
৪ রানের মধ্যেই দুই ডাচ ওপেনারকে তুলে নেন এই দুই পেসার। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই বিক্রমজিত সিংয়ের (৩) উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বলে মিড অফে বিক্রমজিতের ক্যাচ ধরেন সাকিব আল হাসান।
পরের ওভারেই আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। স্লিপে দাঁড়িয়ে ম্যাক ও’দাউদের (০) ক্যাচ ধরেন তানজিদ হাসান তামিম। ৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে ডাচরা।
এরপর ওয়েসলি বেরেসি আর কলিন অ্যাকারম্যান গড়েন ৫৯ রানের জুটি। বেরেসিই ছিলেন বেশি ভয়ংকর। ৪১ বলে ৪১ করা এই ব্যাটারকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মোস্তাফিজ। পরের ওভারে ধীরগতির অ্যাকারম্যানকে (৩৩ বলে ১৫) ফেরান সাকিব।
বেস ডি লিডি সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ২৫.২ ওভারে দলীয় রান ১০০ পার করে নেদারল্যান্ডস। ডি লিডিকে (৩২ বলে ১৬) উইকেটরক্ষক মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ডাচদের চাপে ফেলেন তাসকিন আহমেদ। আম্পায়ার অবশ্য শুরুতে আউট দেননি। রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখা যায় বল ডি লিডির গ্লাভসে হালকা স্পর্শ করে গেছে মুশফিকের হাতে। ১০৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।
কিন্তু অ্যাডওয়ার্ডসকে ১৬তম ওভারে জোড়া জীবন দেওয়াই বিপদ ডেকে এনেছে। দেখেশুনে খেলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ডাচ দলপতি। ষষ্ঠ উইকেটে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটে নিয়ে ১০৫ বলে ৭৮ রানের জুটি গড়েন তিনি।
অবশেষে ৪৫তম ওভারে এই জুটিটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। দুই জীবন পাওয়া অ্যাডওয়ার্ডস ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। ৮৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৬৮ রান আসে ডাচ অধিনায়কের ব্যাট থেকে।
পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটার সাইব্র্যান্ডকে (৬১ বলে ৩৫) এলবিডব্লিউ করেন শেখ মেহেদি। তবে লগান ফন বিক শেষ ওভারে এসে টাইগার অফস্পিনারের ওপর চড়াও হন। তুলে নেন ১৭ রান।
প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি আর চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পঞ্চম বলে সিঙ্গেলস নিয়ে ফন বিক দেন পল ফন ম্যাকেরেনকে। ম্যাকেরেন মেহেদির বলে এলবিডব্লিউ হলে ২২৯ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদি আর মোস্তাফিজুর রহমান। সাকিব আল হাসানের শিকার এক উইকেট।