ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের হামলায় নিহত পুলিশ কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলামের (৩৩) পুরোনো বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী গ্রামে। তিনি ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলীর বড় ছেলে। নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে কয়েক বছর আগে তাঁরা টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বাড়ি করেন। সংঘর্ষে নিহতের খবর পেয়ে ফয়েজপুর গ্রামের বাড়িতে মাতম চলছে।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ১০ মে চরকাটারী গ্রামে জন্ম নেওয়া আমিরুল স্থানীয় চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট থেকে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন (সিটিআই–৩) ইউনিটে কর্মরত ছিলেন।
কয়েক বছর আগে চরকাটারী এলাকায় আমিরুলের গ্রামের বাড়ি যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে। এরপর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ফয়েজপুর গ্রামে বাড়ি করেন তাঁরা। ওই বাড়িতে তার বাবা, মা ও ছোট ভাই থাকেন। ঢাকায় কর্মস্থল হওয়ায় স্ত্রী রুমা আক্তার ও মেয়ে তানহাকে নিয়ে শাজাহানপুরের একটি ভাড়াবাসায় থাকতেন তিনি।
শনিবার বিকেলে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম। দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপির কর্মীরা আমিরুলের ওপর হামলা করেন। এতে গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনকালে বিএনপির কর্মীদের হামলায় তার ভাতিজা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, আমিরুলের বাড়ি দৌলতপুরের চরকাটারী গ্রামে হলেও কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে তাঁদের ঘর বিলীন হয়ে যায়। পরে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ফয়েজপুর গ্রামে বাড়ি করেন। নিহত পুলিশ সদস্যের লাশ কোথায় দাফন করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলায় নিহতের খবর পৌঁছানোর পর থেকে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে গ্রামের বাড়িতে মাতম চলছে। নিহত আমিরুলের মামা আব্দুল মান্নান মাস্টার বলেন, আমিরুলের এমন মৃত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না। গ্রামের বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা-মা খবর পাওয়ার পর থেকেই বাড়িতে মাতম চলছে। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। তিনি বলেন, আমিরুল পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। পরিবারের সবার সঙ্গে আলাপ করে কোথায় দাফন করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দপ্তিয়র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, নিহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। ওই পুলিশ সদস্যের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে হলেও নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করছেন। তারা এখনো দৌলতপুর এলাকার ভোটার।