বাংলাদেশের অবস্থা ভালো না। আগের ৬ ম্যাচে মাত্র জয় একটি। পাকিস্তানও টানা চার ম্যাচে হেরে ছিল কোণঠাসা। অবশেষে তারা জয়ের ধারায় ফিরলো বাংলাদেশকে সামনে পেয়ে। বাবর আজমের দল ৭ উইকেট আর ১০৫ বল হাতে রেখে পেলো সহজ এক জয়।
সাত ম্যাচে এটি পাকিস্তানের তৃতীয় জয়। সমান ম্যাচে বাংলাদেশের ষষ্ঠ হার। কাগজে-কলমে এখনও পাকিস্তানের সেমির সম্ভাবনা আছে। আর বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় হয়ে গেলো এই ম্যাচ হেরে।
ইডেন গার্ডেনসে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল মাত্র ২০৫ রানের। ওপেনিং জুটিতেই তারা তুললো ১২৮ রান। অবশেষে সেই ওপেনিং জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আবদুল্লাহ শফিককে এলবিডব্লিউ করে ফেরালেন এই অফস্পিনার। ৬৯ বলে ৯ চার আর ২ ছক্কায় শফিক করেন ৬৮ রান।
পাকিস্তানের যে ৩ উইকেট পড়েছে সবকটিই নিয়েছেন মিরাজ। বাবর আজমকে তিনি ফেরান ৯ রানে, আউট করেন সেট ব্যাটার ফখর জামানকেও। ৭৪ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফেরা ফখর ৩টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা।
আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্প। পাকিস্তানি বোলাররা যে আহামরি কিছু করেছেন, তেমন না। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা তো ব্যাটিংটাই ভুলে গেছেন! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিফটির পরও তাই ৪৫.১ ওভারে ২০৪ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
অথচ কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টসভাগ্য সহায় ছিল বাংলাদেশের। টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির তোপে পড়েন বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা। প্রথম দুই ওভারেই তিনি ফিরিয়ে দেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং ওয়ান ডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে। ৬ষ্ঠ ওভারে মুশফিককে ফেরান হারিস রউফ।
৬ রানেই টপ অর্ডারের দুই ব্যাটারকে হারিয়ে রীতিমত ধুঁকতে শুরু করে টাইগাররা। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ভেতরে ঢুকে যাওয়া আফ্রিদির বলটিকে ঠেকাতে পারলেন না তানজিদ তামিম। বল গিয়ে আঘাত করে প্যাডে। জোরালো আবেদন উঠতেই আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার।
লিটনের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেন তানজিদ তামিম। কিন্তু লাভ হলো না। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। ৫ বলে কোনো রান না করেই ফিরে যান ‘ছোট তামিম’।
তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে আবারও আফ্রিদির স্ট্রাইক। স্লোয়ার বলটিকে পেয়েই ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে শট খেলেন শান্ত। যেন পুরোপুরি পাতা ফাঁদে পা দিলেন তিনি। উসামা মির ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি লুফে নিলেন। ৩ বলে ৪ রান করে আউট হন শান্ত।
৬ষ্ঠ ওভারে ফিরে যান ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিমও। হারিস রউফের অফ স্ট্যাম্পের ওপর রাখা বলটিকে ডিফেন্স করতে গিয়েও ব্যাট ছোঁয়াতে চাইলেন না মুশফিক। কিন্তু বল তার ব্যাটের কিনারা চুমু দিয়ে গিয়ে জমা পড়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। ৮ বলে ৫ রান করে ফিরে যান মুশফিক। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
চতুর্থ উইকেটে সেই বিপর্যয় কিছুটা কাটিয়ে উঠেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর লিটন দাস। ৮৯ বলে ৭৯ রান যোগ করেন তারা। লিটন হাফসেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরগতির ব্যাটিং করেও ফিফটি ছুঁতে পারেননি। ৬৪ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৬ রান করে ইফতিখারের বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন।
আরও একবার দলের বিপদের মুখে হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ২৩ রানের মাথায় দলের ৩ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে এসেছিলেন। দেখেশুনে খেলে ক্যারিয়ারের ২৮তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। বাংলাদেশ দল অনেকটা ঘুরে দাঁড়ায়।
কিন্তু দলীয় ১৩০ রানে মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ৭০ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় ৫৬ রান করে শাহিন শাহ আাফ্রিদির বলে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ।
তাওহিদ হৃদয় একাদশে ফিরেছেন বিরতি দিয়ে। শুরুটাও করেছিলেন ভালো। পাকিস্তানি লেগস্পিনার উসামা মীরকে মিডউইকেট দিয়ে হাঁকিয়েছিলেন দারুণ এক ছক্কা। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যাটারদের সেই পুরোনো রোগ থেকে বের হতে পারলেন না হৃদয়।
ছক্কা মারার পরের বলেই চালিয়ে খেলতে গেলেন। টার্ন করা বল ব্যাটে লেগে চলে গেলো প্রথম স্লিপে। ৩ বলে ৭ রানেই থামলো হৃদয়ের প্রত্যাবর্তন ইনিংস।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অনেকটা সময় লড়াই করেছেন। ফিফটির সুযোগ ছিল। কিন্তু ৬৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৩ করে হারিস রউফের শর্ট বলে পুল খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। ১৮৫ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শঙ্কা ছিল দুইশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার।
তবে মেহেদী হাসান মিরাজ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু দলের রান দুইশ ছুঁতেই যেন দায়িত্ব শেষ মনে করলেন মিরাজ। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ক্রস খেলতে গেলেন, বল সরাসরি আঘাত হানলো উইকেটে।
৩০ বলে একটি করে চার-ছক্কায় গড়া মিরাজের ২৫ রানের ইনিংসটি থামার পর আর এগোতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ২ উইকেটে যোগ করে মাত্র ৪ রান।
পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদি আর মোহাম্মদ ওয়াসিম নেন ৩টি করে উইকেট।