অবরোধ : পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আতঙ্ক, বন্ধ দূরপাল্লার গণপরিবহন

মত ও পথ ডেস্ক

বন্ধ দূরপাল্লার গণপরিবহন। সংগৃহীত ছবি

অবরোধকে ঘিরে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের আতঙ্ক কাটেনি। আর সেই আতঙ্কে সড়কে বাস নামাতে ভয় পাচ্ছেন পরিবহন মালিকরা। যদিও অবরোধে সড়কে বাস নামাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন মালিক সমিতির নেতারা। কিন্তু অতীতের ঘটনা মনে করে সড়কে দূরপাল্লার গণপরিবহন নামাননি তারা। শঙ্কা ও আতঙ্কের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন গণপরিবহন মালিকরা। সমিতির নেতারা গাড়ি চালানোর কথা জানালেও অবরোধ শুরুর সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বেশিরভাগ পরিবহন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে বিএনপির টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি। এই অবরোধকে ঘিরে পরিবহন মালিক সমিতি দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকার কথা জানালেও মঙ্গলবার সকাল থেকে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাসই তাদের ট্রিপ বাতিল করেছেন। তবে দুয়েকটি পরিবহন অল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়েই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে, যা অন্যান্য দিনের তুলনায় নেহায়েতই কম।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজেদের নিরাপত্তার পাশাপাশি যে পরিবহনে চাকরি করে নিজের এবং পরিবারের ভরণ পোষণ চলে সেটিতে যেন কোনোধরনের সমস্যা না হয় সেরকম একটা আশঙ্কা থেকেই দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে অনেকেই গাড়ি বের করেনি আর যাত্রীর সংখ্যাও অনেক কম। কারণ গাড়িতে আগুন কিংবা ভাঙচুর এর ঘটনা ঘটলে একদিকে যেমন জীবনের একটি শঙ্কা থাকে সেরকম কিছু ঘটলে চাকরিও হারাতে হয়, বসে থাকতে হয় বেকার হয়ে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী এবং সায়দাবাদ এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার গণপরিবহন তেমন একটা ছেড়ে যায়নি। অবরোধ শুরু হওয়ার পর অবস্থা বিবেচনা করে যদি কোনো সংখ্যা পরিলক্ষিত না হয় তাহলে বেলা বাড়লে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে গাড়ি কখন বের করা হবে। আর যাত্রী থাকলে পথঘাটের বিভিন্ন বিষয় খোঁজখবর নিয়ে গাড়ি ছাড়া হবে। অবরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৩-১৫ বা ২০১৮ সালের মতো যেন না ঘটে সে বিষয়টি মাথায় রয়েছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। তারপরও জীবিকার তাগিদে শ্রমিকদের গাড়ি নিয়ে নামতে হয়। তবে তারা বলছেন, দিনের বেলা গাড়ি না ছাড়লেও রাতের বেলায় গাড়ি ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

রাজধানীর আরামবাগ ‘গ্রীন লাইন’ কাউন্টারের ম্যানেজার এরশাদ বলেন, সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। অবরোধ সকাল থেকে শুরু হয়েছে রাস্তাঘাটের খবরা-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে রাতে সীমিত আকারে গাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

সোহাগ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার ম্যানেজার রায়হান বলেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকে কোনো গাড়ি ছাড়া হয়নি। কারণ একটি গাড়ির দাম অনেক কেউ যদি কোনো গাড়ি ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে তাহলে মালিক কিংবা শ্রমিকদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। সেই আতঙ্ক থেকেই কোনো বাস ছাড়া হয়নি।

পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, অবরোধকে কেন্দ্র করে কোনোধরনের নাশকতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশি সহায়তা নেওয়ার জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা বলেন, অবরোধ কিংবা হরতাল আমাদের পরিবহনের জন্য আতঙ্কের। এই দুই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরিবহন ভাঙচুর বা আগুনের ঘটনা বেশি ঘটে আমরাই টার্গেটে পরিণত হই। বিএনপির সমাবেশ এবং হরতালকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫টির মতো গাড়ি আগুন এবং ভাঙচুরের কবলে পড়ে। এসব গাড়ি ভাঙচুর হলে বা আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটলে একেক জন মালিক নিঃস্ব হয়ে যায়। আর সে কারণে হরতাল কিংবা অবরোধের মতো ঘটনা ঘটলে কেউ সড়কে তার নিজের পরিবহনটি নামাতে চায় না।

তিনি আরো বলেন, আজ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হলো, আমরা অবস্থা সবগুলো পর্যালোচনা করছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করছি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে গাড়ি সড়কে নামানো হবে কিনা।

শেয়ার করুন