চলতি মাসের শুরুতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে অনেক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আনুমানিক ২৩০ জন তাদের কাছে জিম্মি রয়েছে। ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্রুত সময়ের মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধারে প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। এ অবস্থায় জিম্মিদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা ইসরায়েলি কারাগারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে জিম্মিদের উদ্ধারে নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে। জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে পরোক্ষভাবে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছে ইসরায়েলি সূত্র। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক প্রধান জিওরা আইল্যান্ড গাজায় জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে হামাসের সদস্যসহ প্রায় ৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবার জিম্মিদের কিছু স্বজন তেল আবিবে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকেও এ নিয়ে চুক্তি করার দাবি তোলেন। রোববার এক বৈঠকে একটি প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগকে জিম্মি উদ্ধারকে রাজনৈতিক কর্মসূচির শীর্ষে রাখার আহ্বান জানায়।
কাতারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জিম্মি উদ্ধারে দোহার মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে ইসরায়েলি স্থল অভিযান প্রক্রিয়াটিকে জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, তারা এখনও কথা বলছেন। তবে স্থল অভিযানের বিষয়টি আলোচনার গতি কমিয়ে দিয়েছে। অবশ্য একেবারে বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে আসন্ন অগ্রগতির লক্ষণও নেই। জ্যাকি লেভি নামে এক ইসরায়েলির তিন স্বজন হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জিম্মিদের উদ্ধারের বিষয়টি রাষ্ট্রের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হয় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ জড়িয়ে গেছে।
সরকার বলেছে, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন হামাসকে পরাজিত করার সমান একটি লক্ষ্য। তবে কিছু পরিবারের আশঙ্কা, সরকারের নির্বিচারে বোমা হামলা কিংবা হামাস প্রতিশোধের কারণে তারা তাদের প্রিয়জনকে হারাতে পারেন। হামাস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বোমা হামলায় ৫০ জন জিম্মি মারা গেছে। গাজার হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার শনিবার জানিয়েছেন, ইসরায়েলি কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে তারা গাজায় জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে কিছু জিম্মির স্বজনরা ইসরায়েলি বোমা হামলাকে সমর্থন করেন এবং হামাসের কোনো সদস্যের বিনিময়ে বন্দি মুক্তির বিরোধিতা করেন।
এদিকে যত দিন যাচ্ছে, বন্দিদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ ততই বাড়ছে এবং তারা এ ইস্যুতে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক প্রধান আইল্যান্ড বলেন, ইসরায়েলের সব জিম্মির মুক্তির জন্য দুটি ছাড় দেওয়া ঠিক হবে। প্রথমত, ইসরায়েলে ৫ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া এবং গাজায় আরও ভয়াবহ অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা।
ইসরায়েলি প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, জিম্মিদের আগে উদ্ধার করতে হবে। ২২৯ জনকে কোরবানি করার কোনো অধিকার রাষ্ট্রের নেই। কেউ এ আদেশ দিতে পারে না। সচেতনভাবে বা কৌশলগত– যেভাবেই হোক না কেন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই মানুষদের ক্ষতি করার অনুমতি দেওয়া যায় না। ইসরায়েলকে অবশ্যই সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং জিম্মিদের অবিলম্বে ফেরত আনতে হবে। সেটা আজ সম্ভব হলে আজই।