বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিনে প্রথম দিনের তুলনায় রাজধানীতে যান চলাচল বেড়েছে। বেড়েছে মানুষের চলাফেরাও। বুধবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। একই সঙ্গে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড, সাদ্দাম মার্কেট, শনির আখড়া, রায়েরবাগ ঘুরে দেখা গেছে, গতকালের চেয়ে বেশি গাড়ি চলাচল করছে। বাস স্টপেজগুলোতে মানুষের আনাগোনাও ছিল বেশি।
যানবাহন সংকটে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে এমন চিত্র দেখা যায়নি। বরং রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে কিছু বাসকে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস, মিনিবাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পণ্যবাহী ট্রাক, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার চলাচল করতে দেখা গেছে।
তবে গতকালের মতো আজও দূরপাল্লার বাস ছিল খুবই কম। মহাসড়ক ধরে দু-একটি দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
সাদ্দাম মার্কেট বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে ছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি মতিঝিলে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, আজ পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিকই দেখছি। একটু পর পর বাস আসছে। তবে ভয়-তো একটু আছেই। কখন কী হয়ে যায়, বলা যায় না। কিন্তু চাকরি করলে ঘর থেকে বের না হয়েও উপায় নেই।
কাঁচপুর-গুলিস্তান রুটে চলাচল করা শ্রাবণ পরিবহনের চালক আসাদুজ্জামান বলেন, গাড়ি না চালালে পেট চলবো কেমনে? মনে ভয় আছে, তারপরও বাইর হইছি। পুলিশ-টুলিশ তো আছে। তবে যাত্রী বেশি নাই।
সাইনবোর্ড এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। আমাদের এ অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
বুধবার গাড়ির চাপ বাড়ার কারণে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় যানজটও দেখা গেছে। চৌরাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক কনস্টেবল মফিজার রহমান বলেন, আজ গাড়ি অনেক বেশি। সিগন্যাল দেওয়া লাগছে, না হয় জ্যাম বেধে যাচ্ছে।
অন্যদিকে সকাল ৮টায় সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়, রাস্তায় একের পর এক গাড়ি চলছে। তবে পথচারী তেমন একটা দেখা যায়নি। অফিসগামী মানুষের সংখ্যাই বেশি। যে গাড়িগুলো রাস্তায় চলাচল করছে তাতেও ভিড় নেই৷ অনেক গাড়ির সিট ফাঁকা। কোনোরকম সিগন্যাল ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান থাকায় ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের সামনে পরীক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।
নীলক্ষেত মোড়ে কথা হয় মিরপুর সুপার লিঙ্কের চালক হাবিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল অনেক টেনশনে ছিলাম। কী হতে কী হয়! খবরে দেখলাম ঢাকায় দু-এক জায়গা ছাড়া ঝামেলা হয়নি। তাই আজ গাড়ি নিয়ে বাহির হইছি। যাত্রীও কম। অন্য সময় সকালে যাত্রী গাড়ির মধ্যে দাঁড়ায়ে থাকে, আজকে সিট ফাঁকা।
এ সড়কে চলাচলকারী ভি.আই.পি গাড়ির চালকের সহকারী রাবিক বলেন, ফজরে গাড়ি নিয়া বাইর হইছি। গতকাল এক ট্রিপ মারছি। আজ চিন্তা করছি সারাদিন ট্রিপ দিমু। রাস্তায় পুলিশ দেখলাম। ঝামেলা হইবো না মনে হয়।
নীলক্ষেত মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা লিমন আহমেদ বলেন, আমি আজিমপুরে থাকি। হরতাল-অবরোধ যাই হোক, অফিস করতে হবে। অবরোধে অফিস বন্ধ থাকে না। এখন গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।
এদিকে গতকালের মতো আজও সড়কে ব্যক্তিগত যান, মোটরসাইকেল ও রিকশার চলাচল বেশি দেখা গেছে। সায়েন্সল্যাব এলাকার রিকশাচালক শহিদুল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। রিকশা চালাইয়া রোজগার কইরা খাই। অবরোধ হইলেও রিকশা চালান লাগে। ভাড়া অনেক সময় দশ-বিশ টাকা বেশি চাই, দিতে চায় না সবাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান। সকাল সাড়ে ৯ টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই সকাল ৭টার পর থেকেই কেন্দ্রের সামনে আসতে শুরু করেছেন।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সিনথিয়া তাবাসুম বলেন, আমাদের পরীক্ষা চলছে। রাস্তায় সমস্যা হতে পারে সে আশঙ্কা থেকেই আগে আগে চলে এসেছি। আমি মিরপুরে থাকি। সকালে রাস্তায় জ্যাম পাইনি। সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রের সামনে চলে এসেছি। এখন আর টেনশন নাই।