পোশাক কারখানার নিরাপত্তায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুশ-ইন ঠেকাতে প্রস্তুত বিজিবি
ফাইল ছবি

গাজীপুর, কোনাবাড়ি, সফিপুর, চন্দ্রা, সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে কারখানার নিরাপত্তায় ১৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ শনিবার বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, শনিবার সপ্তম দিনের মতো মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সাভারের আশুলিয়ায় সড়কে নেমে অবরোধের চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা। বাধা দিলে এসএম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সহ দুই পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে।

এছাড়া শনিবার সকালে গাজীপুরের মৌচাকের তেলির চালা এলাকায় থেকে শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। কোনাবাড়ি, মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, ভোগড়া বাইপাস সড়ক, বাসন সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা বেশ কিছু এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের নামে গাড়ি, কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও বেশ কিছু কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ অবস্থায় শিল্প এলাকায় বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এদিন সকাল থেকেই অধিকাংশ পোশাক কারখানা খুলেছে। এসব কারখানায় শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনে ছিলেন অনেকেই। তারা বিক্ষোভের পাশাপাশি রাস্তা অবরোধ করতে যায়। এ সময় রাস্তা থেকে তাদের সারিয়ে দিতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসএম নিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। এ সময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর শ্রীপুর সাব-জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আসাদ, পরিদর্শক আবদুর নুরসহ কয়েকজন আহত হন। এরমধ্যে এক নারী গার্মেন্টস কর্মী মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যরাও কাজ করছেন।

এদিকে, শ্রমিক আন্দোলন পুঁজি করে কোনো ধরনের নাশকতা-সহিংসতার মাধ্যমে পোশাকশিল্পের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

শনিবার দুপুরে সাভারের আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় র‌্যাব-৪ সিপিসি-২ এর কার্যালয়ে পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা রোধে পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন, র‌্যাবের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও মতবিনিময় সভায় দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অধিকাংশ উপার্জন পোশাকশিল্প থেকে আসছে। এই শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল বা দুষ্কৃতিকারীরা উঠে পড়ে লেগেছে।

তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে আমাদের দেশের শান্তিপ্রিয় পোশাক শ্রমিকরা তাদের বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। বিষয়টি সরকারের দপ্তর, বেসরকারি সংস্থা, মালিকদের সংগঠন সবাই আমলে নিয়ে মঞ্জুরি কমিটি গঠন করে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি একটি মহল শ্রমিকদের ভুল তথ্য ও গুজবের মাধ্যমে বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য উসকানিমূলক তথ্য দিয়ে অরাজকতা, সহিংসতা বা নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যারা এই শান্তিপ্রিয় শ্রমিক ভাইদের নিয়ে নাশকতা, সহিংসতার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

র‌্যাব কমান্ডার বলেন, ইতোমধ্যে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা হামলা ও সহিংসতা করছে। তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। র‌্যাব ফোর্সেস এই চলমান সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সাইবার ওয়ার্ল্ডে নজরদারি বৃদ্ধি।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন র‍্যাব-৪ সিপিসি-২–এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাকিব মাহমুদ খানসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শেয়ার করুন