রাজধানীর সড়কে সতর্ক চোখ পুলিশের, আগের তুলনায় বেড়েছে গণপরিবহন

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনের সকালে সড়কে অন্য দিনের তুলনায় বেড়েছে গণপরিবহন ও মানুষের সংখ্যা। একইসঙ্গে নাশকতা রোধে মোড়ে মোড়ে সতর্ক নজর রাখতে দেখা গেছে পুলিশের সদস্যদের।

সোমবার (৬ নভেম্বর) সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর আসাদ গেট, কলেজ গেট, শিশু মেলা এবং শ্যামলী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার অবরোধের অন্য দিনগুলোর তুলনায় আজকের সকালের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সকাল থেকেই সড়কে কর্মজীবী ও অফিসগামী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। জেলাভিত্তিক চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, স্টাফ বাস, মাইক্রোবাস, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের বাসসহ সড়কে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন বাস স্টপেজেও বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যাও অনেক বেশি।

সড়কে মানুষের উপস্থিতি এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বেশি থাকায় অনেকটা স্বস্তির কথা জানালেন যাত্রীরা।

শ্যামলীতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ রিয়াজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, অবরোধ চললেও ক্লাস ছুটি নেই। তাই সকালেই বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেতে হয়। গত কয়েকদিন দেখেছি সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। এতে কিছুটা ভয় লাগত। আজ সকাল থেকেই সড়কে অনেক মানুষ। বাসের সংখ্যাও বেশি। আজ কোনো আতঙ্ক কাজ করছে না, বরং ভালোই লাগছে।

নুরজাহান নামের আরেক যাত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধ যাই হোক, আমাদের কর্মের তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে হয়। অন্যদিনের তুলনায় আজ সড়কে মানুষের সংখ্যা বেশি, বাসের সংখ্যাও বেশি। আর ঘন ঘন বাস আসছে। তবে প্রতিটি বাসেই যাত্রী প্রচুর। অন্যদিন বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো, আজ তেমনটি হয়নি।

অপরদিকে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে সতর্ক অবস্থান এবং অলিগলিতে গাড়ি নিয়ে টহল দেওয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিশু মেলা মোড়ে ডিএমপির ও শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ সদস্যদের সম্মিলিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়।

শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সতর্ক নজর রাখছি। এখন পর্যন্ত এ এলাকায় কোনো ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের খবর পাইনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর অবস্থানের কারণে কেউ এ ধরনের কাজ করার সাহস করবে না। তারপরও আমাদের টহল টিম ঘুরে ঘুরে দেখছে এবং আমরা বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছি। অন্যদিনের তুলনায় আজ বাইরে মানুষের উপস্থিতিও বেশি। কোনো ধরনের আতঙ্ক বা সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এবং মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। তাদের আন্দোলনের শরিকরাও এই অবরোধ পালন করছে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও আলাদা করে এই ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।

এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিন দিন (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর) টানা অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াত। তার আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে তারা।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করার পর একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও উপর্যুপরি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির সমাবেশ ভন্ডুল করে দেয়। এর ফলে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়, পুলিশের বহু সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। ওই কয়েকদিনে মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শেয়ার করুন