আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে হলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবশ্যই জয় প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। সেই কাঙ্খিত জয়টিই এলো দিল্লির অরুন জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে। শ্রীলঙ্কার ছুঁড়ে দেয়া ২৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য বাংলাদেশ পার হয়ে গেছে ৪১.১ ওভারেই। ৩ উইকেটের ব্যবধানে লঙ্কানদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা ধরে রাখলো সাকিব আল হাসানের দল।
আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছিলো টাইগাররা। কিন্তু বিশ্বকাপে এরপরে যাত্রা শুধুই হতাশার। একের পর এক ম্যাচ হেরে সবার আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছিলো টাইগারদের। নেদারল্যান্ডসের মত দলের কাছেও হারতে হয়েছিলো সাকিব আল হাসানদের।
কিন্তু আইসিসির নতুন নিয়মে বাংলাদেশের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনাই শেষ হতে বসেছিলো প্রায়। বিশ্বকাপে সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে পারলেই কেবল ২০২৫ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাবে টাইগাররা।
সে লক্ষ্যে শেষ দুই ম্যাচের মধ্যে অন্তত একটি জয় পেতেই হবে। এরপরও অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’র অবকাশ থাকবে। তবুও প্রথমে তো নিজেদের কাজটি করে দেখাতে হবে! সে কাজটিই আজ করে দেখাতে পারলো টাইগাররা।
লঙ্কানদের ২৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পার হতে গিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। সাকিব আল হাসান এবং নাজমুল হোসেন শান্তর ১৬৯ রানের বিশাল জুটিই বাংলাদেশকে জয়ের ভিত রচনা করে দেয়।
তবুও ম্যাচে যে উত্তেজনা চড়িয়েছিলো, তাকে নিজেদের ওপর গেঁড়ে বসতে দেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহিদ হৃদয় এবং তানজিম সাকিবরা। যে কারণে ৫৩টি বল হাতে রেখে অনবদ্য জয়ের রাস্তা খুঁজে নিতে পেরেছিলো বাংলাদেশ।
এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ উঠে এসেছে সাত নম্বরে। সমান ৪ পয়েন্ট হলেও রান রেট বেড়ে নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার উপরে উঠে গেছে টাইগাররা।
২৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল টাইগারদের। প্রথম দুই ওভারে তুলে নেয় ১৭ রান। কিন্তু তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান তানজিদ হাসান তামিম। বরাবরের মতোই ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন তিনি। দিলশান মধুশঙ্কার একটি বল খেলতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন। ক্যাচ ধরেন পাথুম নিশাঙ্কা।
পরের উইকেটটিও নেন মধুশঙ্কা। ৪১ রানের মাথায় লেগ বিফোর আউট হন লিটন। ২২ বলে তিনি করেন ২৩ রান। এরপরের গল্প শুধু সাকিব আর শান্তর। দু’জন মিলে রানের নহর বইয়ে দেন দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে।
১৬৯ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে তোলেন তারা দু’জন। ৩১.১ ওভারে দলীয় ২১০ রানের মাথায় আউট হন সাকিব। ম্যাথিউজের একটি বল ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যাটরে কানায় লাগিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। মিডঅফে চারিথ আশালঙ্কা ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটি তালুবন্দী করে নেন।
ম্যাথিউজ এ সময় সাকিবকে হাতের দিতে ইঙ্গিত করে, ঘড়ির সময় দেখিয়ে বলে দেন যেন, ‘টাইম টু গো আউট’। বিষয়টা ছিল খানিকটা দৃষ্টিকটু। ৬৫ বলে ৮২ রান করে আউট হন সাকিব। ১২টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২ টি ছক্কার মারও মারেন তিনি।
১ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্তও। ম্যাথিউজরে বলেই বোল্ড হয়ে যান শান্ত। ১০১ বলে ৯০ রান করেন তিনি। শান্তর ইনিংস সাজানো ছিলো ১২টি বাউন্ডারিতে।
দুই ভায়রা ভাই মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সুযোগ ছিল ম্যাচ শেষ করে আনার। অনেকদিন পর নিজের প্রিয় পজিশন ৫ নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ মেলে মাহমুদউল্লাহর। ৬ নম্বরে নামেন মুশফিক। ১৩ বলে ১০ রান করে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ২৩ বলে ২২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
মেহেদী হাসান মিরাজও ফিনিশার হওয়ার সুযোগটা নিতে পারলেন না। ৫ বলে ৩ রান করে ফিরে যান তিনি। তবে তাওহিদ হৃদয় দৃঢ়তা দেখান। ৭ বলে ১৫ রানে থাকেন অপরাজিত। তানজিম হাসান সাকিব ৮ নম্বরে নেমে ৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
লঙ্কানদের হয়ে দিলশান মধুশঙ্কা ৩টি এবং মহেশ থিকসানা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ নেন ২টি করে উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন সাকিব আল হাসান।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চারিথ আশালঙ্কার ১০৮ রানের ওপর ভর করে ২৭৯ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। ৪১ রান করে সংগ্রহ করেন পাথুম নিশাঙ্কা এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৩৪ রান করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলবা।
৩ উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। ১ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।