আগামী জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র।
গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। এ সময় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রশংসা করেন।
ব্রিফিংয়ে প্রশ্নকারী বলেন, ‘বাংলাদেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। সরকার এক অর্থে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। বিএনপির মহাসচিব, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ আট হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর বিক্ষোভ শুরুর পর অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিরোধী দলের সদস্যদের আগুনে ফেলতে বা তাদের হাত পুড়িয়ে দিতে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবে? একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর পক্ষে কি যুক্তরাষ্ট্র থাকবে?’
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বিষয়টি মনে রাখা জরুরি যে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখান না। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ জানুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া। সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত হওয়া। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানানো।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশি জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সি–৩ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার অনুশীলনের নামে বিএনপি সরকারি সম্পদ ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আগামী নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করছে। আপনি কি বিএনপিকে সহিংসতা বন্ধ করে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন?
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমরা বাংলাদেশের জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবিড়ভাবে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছি। যে কোনো ঘটনাকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। এ নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথাটি তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে অন্য আরেকটি প্রশ্ন করেন এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কঠিন সময় পার করছেন। গত সপ্তাহে বিএনপি একজন মার্কিন নাগরিককে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে তাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে ক্যামেরার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বলা হয়, তিনি প্রতিদিন বাইডেনের সঙ্গে ১০–১৫ বার যোগাযোগ করেন। আবার বিএনপির আরেক নেতা পিটার হাসকে দেবতা বলেছেন। তাদের দলের ত্রাণকর্তা বলেছেন। আপনি কি স্পষ্টভাবে বিএনপির দাবি অস্বীকার করবেন?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, আমি ওই প্রতিবেদন দেখিনি। আপনি যা বলছেন, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে ঢাকায় দূতাবাসে আমাদের দারুণ একটি দল রয়েছে। এই রাষ্ট্রদূত শুধু ঢাকায় নয়, আরও বৃহত্তর অঞ্চলে তিনি কাজ করে থাকেন।