পরাশক্তির প্রতিযোগিতায় ‘মূল ময়দান’ হবে বাংলাদেশ : গবেষণা

মত ও পথ ডেস্ক

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জাতীয় পতাকা। সংগৃহীত ছবি

ভৌগোলিক অবস্থানগত ‘সুবিধার’ কারণে পরাশক্তি দেশগুলোর শক্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় ‘মূল ময়দান’ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতের উত্থান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীন-মার্কিন উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এমনটি হবে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গত সোমবার প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড রিবুট’ শীর্ষক এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাবলিক ইউনিভার্সিটি উইলিয়াম অ্যান্ড মেরির গবেষণা ল্যাব ‘এইড-ডেটা’। এই গবেষণায় কেস স্টাডি হিসেবে বাংলাদেশ, জাম্বিয়া এবং আর্জেন্টিনাকে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি চীনের গ্লোবাল ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) মূল্যায়ন করেছে।

সমীক্ষা অনুসারে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরও সুযোগ আসবে ঢাকার দুয়ারে।

এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী উদার গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে ‘স্বৈরাচারের পথে’ বাংলাদেশকে আরও নিচে ঠেলে দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডের নিন্দা করতে বাধ্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বাস্তবতা হচ্ছে, চীনের প্রভাব দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রসারিত হচ্ছে।

এইড-ডেটার তথ্যমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে সাহায্য ও ঋণের ক্ষেত্রে চীনের প্রতিশ্রুতি বছরে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়নের উৎস হিসেবে চীন এখন বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন অর্থ প্রদান করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ প্রদানকারী দেশের তালিকায় শীর্ষে ছিল জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তবে এরপরে বেইজিং ১৭.৫ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ও ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়। বিআরআই চালুর পর থেকে ঢাকার একক বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হয়েছে চীন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় এসে ‘কী উন্নয়ন করেছে’, দৃশ্যমান ভৌত অবকাঠামোগুলো তার নজির হিসেবে কাজ করে নির্বাচনের আগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পূর্ণরূপে স্বজনপ্রীতিবাদী টেক্সটাইল শিল্পপতিদের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। শেখ হাসিনার দল দুর্নীতির মতো কাঠামোগত সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য নতুন কোনো ধারণা রাখে না।

সমীক্ষা বলছে, এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও প্রধান বিরোধীদলগুলো বিশৃঙ্খল এবং সুশীল সমাজে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর অনেকাংশে নীরব। (এমন প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়) আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা জয়ী হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশের শিল্প ক্ষেত্রে টেক্সটাইলের পাশাপাশি নতুন নতুন প্রতিযোগিতামূলক শিল্পের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। এ জন্য বিনিয়োগ, দক্ষতা বিনিময় এবং পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহকে এক সূত্রে বাধা প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক গভীর করা, মিয়ানমারের মাধ্যমে পরিকল্পিত রেল সংযোগ স্থাপন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে পারে বাংলাদেশ।

আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী জোটের কারণে (এ অঞ্চলে শক্তি প্রতিযোগিতায়) যুক্তরাষ্ট্রের পথ সুগম হবে। তবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে টার্গেট করা এবং (বাংলাদেশে) সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলী ওয়াশিংটনকে কঠিন অবস্থানে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছে আই-ডেটা।

শেয়ার করুন