টানা দুই সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলেছে। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তলিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এরপরও বাজার মূলধন বড় অঙ্কে কমেছে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে গেছে। অপরদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় চার পয়েন্ট। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।
গেলো সপ্তাহের বেশিরভাগ কার্যদিবস অবরোধের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশ। বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা এই অবরোধের মধ্যে শেয়ারবাজারের লেনদেন প্রক্রিয়া ছিল স্বাভাবিক। তবে শেয়ারের দাম বাড়া-কমার ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিষ্ঠানের চিত্র ছিল বেশি অস্থির।
এমন অস্থিরতার মধ্যে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৫টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৯টির। আর ২২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম অপরিবর্তি থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
দাম কমার থেকে দাম বাড়ার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকার পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এদিকে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৭ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৩ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ২১ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমার পর ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ পয়েন্টের মতো বাড়লো।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়লেও অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে। গেলো সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গেলো সপ্তাহে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ১৯৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৪০২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ৭৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে দেশবন্ধু পলিমার।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বিচ হ্যাচারি, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, ইস্টার্ণ ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং সমরিতা হাসপাতাল।