চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও পরে অতিবর্ষণের ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন রাজশাহীর কৃষকরা। কিন্তু সব শঙ্কা ছাপিয়ে এবার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমি আবাদ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা জানালেন কৃষকরা। একইসঙ্গে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খুশি তারা।
কৃষকরা বলছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও পরে অতিবর্ষণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় থাকলেও, তা কেটে গেছে। বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজশাহীর ৯ উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ৭৫৯ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৬২ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার ৮৩২ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮৬ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। গত বছরের মতো এবারও বেশি জমি আবাদ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার কয়েকজন কৃষকের ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, উৎসবমুখর পরিবেশে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা। কেউ ধান কেটে বাড়িতে তুলছেন, আবার কেউ ক্ষেতের পাশে মাড়াই করছেন। কেউ কেউ ধানক্ষেতের পাশে মাড়াই করে বস্তায় ভরে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আমন চাষে তেমন বেগ পেতে হয়নি। তবে মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও পরে অতিবর্ষণের ফলে কোনও কোনও কৃষকের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব জমি ডুবে গিয়েছিল, সেগুলোতে ফলন কম হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার পোকামাকড়ের আক্রমণও কম ছিল। সবমিলিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলন পেয়েছেন। সেইসঙ্গে মৌসুমের শুরুতে বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। তারা আশা করছেন, ধানের দাম এবার কমবে না।
আড়াই বিঘা জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার শিবসাগর এলাকার কৃষক মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমি আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত ধানের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতি বিঘায় ২২ মণের ওপরে ফলন হবে বলে আশা করছি।’
দুই বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন পবা উপজেলার কৃষক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে কয়েকদিন আগের বন্যায় ধানক্ষেতের কিছু অংশ ডুবে গিয়েছিল। ডুবে যাওয়া অংশে ফলন কম হয়েছে। তবে বেশিরভাগ জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, লাভবান হবো।’
এবার লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমি আবাদ হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত সাত থেকে ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমি আবাদ হওয়ায় উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে বন্যায় কিছু জমি ডুবে যাওয়ায় অল্প সংখ্যক কৃষকের ফলন কম হতে পারে। তার পরিমাণ বেশি নয়।’