মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামালপুরের শামসুল হকের (বদর ভাই) সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
শামসুল হকের খালাস চেয়ে করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ৭ নভেম্বর দিন ধার্য ছিল। পরে রায়ের দিন পিছিয়ে ১৪ নভেম্বর দিন ঠিক করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১৮ অক্টোবর আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন।
গত ১২ জুলাই তার আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ওইদিন শুনানি শেষ হয়।
২০১৫ সালের ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের আটজনের বিচার শুরু হয়। এ মামলায় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও মরদেহ গুমের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এ মামলার রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে আট আসামির মধ্যে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- জামালপুরে আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসাইন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারী। আর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, হারুন, আবুল হাশেম, মো. শামসুল হক ওরফে বদর ভাই ও এস এম ইউসুফ আলীকে।
দণ্ডিতদের মধ্যে কেবল শামসুল ও ইউসুফ কারাগারে ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। অন্য ছয়জনকে পলাতক দেখিয়ে এই মামলার বিচার শেষ করা হয়। পরে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন শামসুল ও ইউসুফ। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় ইউসুফের মৃত্যু হয়।
পরে গত ১২ জুলাই শামসুল হকের আপিলের শুনানি শুরু হয়। এ মামলার রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো।
এর আগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। আর সর্বশেষ চার বছর আগে জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখে পুনর্বিবেচনার রায় দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।