বিশ্বকাপের শুরু থেকেই হট ফেবারিটের তকমা মাথায় নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে ভারত। কেন তাদেরকে সম্ভাব্য বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বলা হচ্ছিল সেটা মাঠের খেলাতে বেশ ভালভাবেই তারা প্রমাণ করছে। প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে রান চাপায় পিষ্ট করে ফাইনালে উঠলো ভারত। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিতে হারার এক প্রকার প্রতিশোধও নিয়ে নিল তারা। কিউইদের তারা হারালো ৭০ রানের ব্যবধানে।
ভারতের দেয়া ৩৯৮ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে দারুণ শুরু করে নিউজিল্যান্ড। বুমরাহর করা প্রথম ওভারে দুটি চার মারেন কনওয়ে। তবে কিউইদের প্রথম উইকেট পেতে বেশি সময় লাগেনি ভারতের।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই শামির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ১৩ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন কনওয়ে। আরেক ওপেনার রাবিন্দ্রাও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। তিনিও ১৩ রান করে শামির বলের শিকার হন।
৩৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে টেনে তোলেন দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেল। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা দুইজন ১৪৯ বলে ১৮২ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে আবার ম্যাচে ফেরান।
তবে এই ম্যাচে ফেরার আনন্দ ছিল ক্ষণিকের। মোহাম্মদ শামীর আরো এক ওভারের ঝড়ে পুরো লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কিউই ব্যাটিং লাইনআপ। ৩৩তম ওভারে কেন উইলিয়ামসনকে ৬৯ রানে আউট করেন শামি। এর ঠিক দুই বল পর একই ওভারে টম লাথামকে লেগ বিফোরে ফাঁদে ফেললে ২২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে কিউইরা।
উইলিয়ামসন বিদায় নিলেও আরেক প্রান্তে ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নেন ড্যারেল মিচেল। গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে আবারো ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন মিচেল।
মোহাম্মদ সিরাজের করা ৪১তম ওভারে একাই ২০ রান নেন ফিলিপস। ম্যাচে ফেরার সুযোগ তৈরি হয় কিউইদের। তবে আবারো ৬ বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় নিউজিল্যান্ড।
৪৩ তম ওভারের ৫ম বলে বুমরাহর বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিড অফে জাদেজার হাতে ক্যাচ দেন ফিলিপস। এর ঠিক পরের ওভারের ৫ম বলেই মাত্র দুই রান করে কুলদীপ যাদবের বলে আউট হন মার্ক চ্যাপম্যান। ২৯৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যায় কিউইরা।
শেষ ৬ ওভারে ৯৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্য আর ছোঁয়া হয়নি কিউইদের। ৪৬তম ওভারে শামির বলে মিড উইকেটে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১৩৪ রান করা ড্যারেল মিচেল। তার আউটের মাধ্যমেই শেষ আশাটুকু শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। শেষ পর্যন্ত ভারতের বোলিং তোপে ৩২৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।
ভারতের পক্ষে শামি ৭টি, যাদব, সিরাজ ও বুমরাহ ১টি উইকেট পান।
এর আগে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ারের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়েছে ভারত। অর্থাৎ ফাইনালে যেতে কিউইদের করতে হবে ৩৯৮ রান।
মুম্বাই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা।
দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল মিলে ৮.২ ওভারে ৭১ রানের ঝোড়ো জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন। এমনভাবে ব্যাটিং করছিলেন তারা, যেন এটি একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
২৯ বলে ৪৭ রান করে আউট হন রোহিত শর্মা। টিম সাউদির বলে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ২৯ বলে সমান চারটি করে ছক্কা এবং বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
রোহিত আউট হলেও ঝোড়ো ব্যাটিং চালিয়ে যান শুভমান গিল এবং বিরাট কোহলি। ১৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে তারা তুলে ফেলে ১১৮ রান। ২৩তম ওভারে দলীয় ১৬৪ রানের মাথায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরেন গিল।
গিল মাঠ ছাড়ার পর নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসেন শ্রেয়াস আয়ার। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপদ যেন আরও বাড়ে। আয়ার আরও বেশি মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। ৩৫ বলেই ফিফটি পূরণ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
বিরাট কোহলি দেখেশুনে খেলে ক্যারিয়ারের ৫০তম সেঞ্চুরি তুলে নেন। ছাড়িয়ে যান স্বদেশি কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারকে। ওয়ানডে ইতিহাসে ৫০টি সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার হন কোহলি।
তৃতীয় উইকেটে ১২৮ বলে ১৬৩ রান যোগ করেন কোহলি আর আয়ার। অবশেষে টিম সাউদি ভাঙেন এই জুটি। ১১৩ বলে ৯ চার আর ২ ছক্কায় ১১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন কোহলি।
এরপর সেঞ্চুরি হাঁকান মারমুখী আয়ারও। ৬৭ বলে তিনি ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। অবশেষে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ট্রেন্ট বোল্ডের শিকার হন আয়ার। ৭০ বলে ১০৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে তিনি হাঁকান ৮টি ছক্কা!
সূর্যকুমার যাদব শেষদিকে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। ২ বলে ১ করে সাজঘরে ফিরে যান এই ব্যাটার। তবে লোকেশ রাহুল ২০ বলে ৩৯ রান করে দলকে চারশর কাছাকাছি নিয়ে যান। ৭৯ রানে উঠে যাওয়া শুভমান গিল শেষ ওভারে নামলেও মাত্র এক বল খেলার সুযোগ পান, ৮০ রানে থাকেন অপরাজিত।
নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি ১০০ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট।