দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত কোনো দল জোটভুক্ত হয়ে অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে ৩ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে জোটের তথ্য জানাতে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনি জোট গঠন করা হলে, এ জোটের যেকোনও একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এরূপ প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি জোটের প্রতীকের জন্য তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হবে।’
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়। বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। জোটভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দলের সম্মতি সাপেক্ষে একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবেন তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল নিজেদের প্রতীক ছেড়ে দিয়ে ভোট করেছিল প্রধান দুই দলের মার্কা নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল তাদের জোটসঙ্গী ১০টি দল। শেষ পর্যন্ত ভোটের আগে ১১টি দল নৌকা প্রতীকে ভোট করতে চাইলেও প্রতীক বরাদ্দের সময় আরও পাঁচটি দলকে নৌকা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। বিএনপির সঙ্গে আরও ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষে ভোট করার কথা জানিয়েছিল। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর তা দাঁড়ায় আট দলে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু হওয়ার পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি জোটের বড় দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়।
এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনও নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে।
জাতীয় পার্টি এই জোটে থাকলেও ভোট করে নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনে দশম সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের জায়গা পায়।
নবম সংসদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে জোট করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন একটি আসনে হাতপাখা প্রতীকে ভোট করে। বিকল্পধারার সঙ্গে জোট করে পিডিপি কুলা প্রতীক ব্যবহার করে কিছু আসনে। এই দলগুলোও দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে।
অপরদিকে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নিবন্ধিত দল বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। আরেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ভোট করে নিজেদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায়।
বিএনপি ও শরিকরা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। আর জামায়াত নিবন্ধন হারায়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪টি। যারা সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবে। দলীয় প্রার্থীদের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মোট ভোটারের এক শতাংশ সমর্থন তালিকা দিতে হবে।
নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে—আওয়ামী লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, তৃণমূল বিএনপি, এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিজেপি, সিপিবি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, এনপিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, খেলাফত মজলিস, বিএমএল, বিএনএফ, গণফ্রন্ট ও ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ।
এছাড়াও বিএনপি, জেপি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, জেএসডি, জাকের পার্টি, বাসদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুক্তিজোট, বাংলাদেশ জাসদ ও বিএনএম ইসির নিবন্ধিত দল।