এবার গোঁফ-দাড়ি ছেঁটে পুরো ক্লিন শেভ হয়ে ইসরায়েলের নাগরিকত্ব চাইলেন হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হক। গোঁফ-দাড়ির পাশাপাশি মাথার চুলও ফেলে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসভবনে অবস্থান করছেন তমিজী। দুদিন তার বাসভবন ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই সময়ে রূপ পরিবর্তন করে ফেসবুক লাইভে এসে জন্মসূত্রে ইহুদি বলেও দাবি করেন। বিভিন্ন ব্যক্তি সম্পর্কে অশালীন মন্তব্যও করতে শোনা যায়।
বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বিভিন্ন সময় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ফেসবুক লাইভে অশালীন কথাবার্তা বলেছেন। এক পর্যায়ে লাইভে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলেন। এর মধ্যেই তিনি ১৩ নভেম্বর ঘোষণা দিয়ে দেশে ফেরেন। পরে তাকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে র্যাব। তবে এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ফেসবুক লাইভে আদম তমিজী বলেন, ‘দ্রুত বাংলাদেশ থেকে তাকে উদ্ধার করা হোক।’ এজন্য তিনি ইসরায়েল সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। গত ১৬ নভেম্বর রাতে তার মুখে দাঁড়ি থাকলেও ১৭ নভেম্বর আরেক লাইভে দেখা যায় তিনি কেটে গোঁফ-দাড়ি কেটে ফেলেছেন।
ভিডিওতে আদম তমিজী হক বলেন, আমি ইসরায়েলের কাছে অভিযোগ করতে চাই, বর্তমানে আমি বাংলাদেশে আটকে আছি। গত তিনদিন আমার বাসায় পানি, বিদ্যুৎ ও খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের উদ্ধার করা হোক। পাশাপাশি ঘরে খাবার নেই, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দ্রুত আমাদের উদ্ধার করা দরকার। আমার মা অর্ধেক ইহুদি। আমি জন্মসূত্রে ইহুদি। আমি ইসরায়েলের নাগরিকত্ব চাই।
বিভিন্ন সময় আলোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ সরব ছিলেন তমিজী হক। প্রতি বছর ওমরাও করেন বলে এতদিন দাবি করেছেন। মুখে রেখেছিলেন দাঁড়ি। হঠাৎ তিনি ভোল পাল্টে নিজেকে ইহুদি দাবি করছেন। যা তিনি অতীতে কখনো করেননি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, নিজের গ্রেফতার এড়াতে এসব কর্মকাণ্ড করছেন তমিজী হক। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের নজরে আসতে চাইছেন এবং মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে দাবিও করতে চাচ্ছেন।
এদিকে আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়েছে। আনিছুর রহমান নাঈম নামে এক ব্যক্তি এ মামলা করেছেন। যা ১৫ নভেম্বর এজাহারভুক্ত হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আদম তমিজী হক ইচ্ছাকৃতভাবে তার কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর, মানহানিকর, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
সাইরা সিদ্দিকী তানহার এক মামলায় ঢাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে একটি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করেছেন। যার কপি গুলশান থানায় পৌঁছেছে।
হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত আদম তমিজী হককে গ্রেফতার করতে গত ১৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায় যান র্যাব সদস্যরা। তবে তাকে গ্রেফতার করতে পারেননি।
গত সেপ্টেম্বরে ফেসবুক লাইভে নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে এবং নিজ দল আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। এরপর তাকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আদম তমিজীর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আইন মেনে তাকে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করতে গেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন। এমনকি নিজের স্ত্রীকে হত্যার হুমকিও দেন তিনি। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
জানতে চাইলে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সব নিয়ম মেনে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চালায়। অভিযানে র্যাব ফোর্সের কর্মকর্তারাসহ ম্যাজিস্ট্রেট ও চিকিৎসককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অভিযানের সময়ে তমিজী হক বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান। এমনকি এ সময়ে তার বাসায় একজন ব্রিটেনের নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। তিনি তমিজীর বন্ধু পরিচয় দেন। এছাড়া তার বাসায় চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। আমরা সব নিয়ম মেনে তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি নিজে ছুরি হাতে আত্মহত্যার হুমকি দেন, বাসার জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলেন, ভবন থেকে লাফ দেওয়ার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, এরপরও আমরা যখন তাকে গ্রেফতার করতে যাই তখন দ্বিতীয়বার বিয়ে করা স্ত্রীকেও ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা তাকে গ্রেফতার করিনি। পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে থাকলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট রয়েছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার এড়াতে আদম তমিজী হক প্রতিদিন নতুন নতুন নাটক করছেন। একবার বলছেন তার মা অর্ধেক ইহুদি। তিনি জন্মসূত্রে ইহুদি। নাটকে কোনো লাভ হবে না। আইন মেনেই তাকে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হবে।