আহমেদাবাদের নীল সমুদ্রে হলুদ উৎসব

ক্রীড়া ডেস্ক

বিশ্বকাপের মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল ভারতের জন্য। টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ক্রিকেটীয় দিক থেকে ধারণক্ষমতায় সর্বোচ্চ স্টেডিয়ামে শিরোপা উদ্‌যাপন করবে তারা। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন ভারতের দর্শক–সমর্থকেরাও। কিন্তু ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার আহমেদাবাদকে যে চুপ করানোর ইচ্ছা নিয়েই মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া এবং তারা তাই করেও দেখাল।

২০১১ সালে মুম্বাইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর আবার ১২ বছর পর যে স্বপ্ন দেখছিল ভারত, তাতে বাধা হয়ে দাড়ালো হলুদ জার্সি ধারী অজিরা। আহমেদাবাদের নীল গর্জনকে নিস্তব্ধ করে হলুদ উৎসবে মাতল অস্ট্রেলিয়া। যেমনটি ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে করবেন বলে জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।

universel cardiac hospital

রোববার (১৯ নভেম্বর) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল নীলের মহাসমুদ্রে। নিজ দেশে এক যুগ পর বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন রোহিত শর্মা। এমন স্বপ্নে পুরোপুরি বিভোর ছিলেন ১৪০ কোটি ভারতীয়। দশ ম্যাচ জিতে সেই কক্ষপথেই ছিল দলটি। কিন্তু ফাইনালে পথের কাঁটা হয়ে দাড়ালেন ট্রাভিস হেড আর মার্নাস ল্যাবুশেন। শুরুতে ৩ উইকেট হারানোর পরও এই দুজনই ধীরে ধীরে ভারতের কাছ থেকে ম্যাচটাকে নিয়ে যান অনেক দূরে। শেষ পর্যন্ত তারাই গড়ে দিলেন ব্যবধান। ভারতের দেওয়া ২৪১ রানের টার্গেট অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলল হাতে ৬ উইকেট রেখে।

এই বিশ্বকাপে অপরাজিত ভারতকে ২৪০ রানে আটকিয়ে জয়ের সুবাসটা প্রথম ইনিংসেই নিয়ে রাখে অস্ট্রেলিয়া। পরে রান তাড়ায় বাকি কাজটুকু একাই সেরেছেন এমন একজন, যিনি আসরের শুরু থেকেই ছিলেন ইনজুরিতে, বলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ট্রাভিস হেডের কথা।

আহমেদাবাদে রান তাড়ার শুরুতে অবশ্য চাপেই পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। ডেভিড ওয়ার্নারকে ৭ রানে ফেরান এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মোহাম্মদ শামি। দলীয় ৫০ রান হওয়ার আগেই হারান আরও ২ উইকেট।

এবার জোড়া আঘাতটা দেন জাসপ্রীত বুমরা। ৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট নেন তিনি। মিচেল মার্শের পর স্টিভেন স্মিথকে ফেরান ভারতীয় পেসার। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ব্যাকফুটে অস্ট্রেলিয়া। তবে পুরো ম্যাচে ভারতীয়দের পাওয়া এতটুকুই বাকি পুরো সময় জুড়েই ছিল হলুদ উৎসব।

চতুর্থ উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটিতেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন ট্রাভিস হেড–মারনাস লাবুশান। তাদের মধ্যকার দুর্দান্ত ১৯২ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে শুধু ঘুরে দাঁড়াতেই সহায়তা করেনি।

ভারতের কাছ থেকে ম্যাচ বেরও করে নিয়ে গেছেন দুজনে। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় লাবুশানে ধীরে সুস্থে খেলতে থাকলেও নিজের আক্রমণাত্মক স্টাইলেই রান করেছেন হেড। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

দলের জয় যখন নিশ্চিত ঠিক তখনই আউট হয়েছেন হেড। ২ রান বাঁকি থাকতে ১৩৭ রানে আউট হয়েছেন তিনি। ১২০ বলের দুর্দান্ত ইনিংসটি ৪ ছক্কা ও ১৫ চারে সাজিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই জয় নিশ্চিত করেন। তার ২ রানের বিপরীতে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন লাবুশানে। তাদের ৬ উইকেটের জয়ে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষা আরও বেড়ে গেল।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪০ রান করে ভারত। ফাইনালের আগে অপরাজিত থাকা ভারত শুরুটা দুর্দান্ত করলেও মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতায় একটা সময় দুইশ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত মাঝারি রানের সংগ্রহটা পেয়েছে দুই ব্যাটার বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের ফিফটিতে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছেন রাহুল। আর ৫৪ রান করেন কোহলি। ৫৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার পেসার মিচেল স্টার্ক।

শেয়ার করুন